ক্রিকেটের পথচলার হিসেবে বেশ পার্থক্য। এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ শুধুই সময় পার করেছে। ওয়ানডে বাদে চোখে পড়ার মতো তেমন উন্নতি হয়নি ক্রিকেটের বাকি দুই ফরম্যাটে। সেই হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের উন্নতি বেশ নজর কাড়া। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই তাদের দাপুটে পদচারণা। সেই আফগানরা দ্বিতীয়বারের মতো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে এসেছে বাংলাদেশে। খেলবে তিন ম্যাচের ওযানডে সিরিজ। শেষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আফগানদের বিরুদ্ধে কেমন করবে বাংলাদেশ?
ওয়ানডে ক্রিকেটে আফগানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে টি-টোয়েন্টিতে। আর টেস্টের হিসেব ধরলে শতভাগ ব্যর্থতা। একটি ম্যাচ খেলা হয়েছে সাদা পোশাকে। যেখানে বাংলাদেশ হেরেছিল ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। ম্যাচটি হয়েছিল চট্টগ্রামে। এবার প্রথমবারের মতো সাগরিকায় ওয়ানডে সিরিজে লড়বে দুই দল।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হয়েছে মোট ৮ ম্যাচে। জয়ের পাল্লা ভারি বাংলাদেশের, ৫টি। হার তিনটি। তবে টি-টোয়েন্টিতে হিসাব ভিন্ন। ছয়বারের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জয় সাকুল্যে দুটি, হার চারটি। তার মানে, এই ফরম্যাটে বরাবরের মতো পিছিয়ে বাংলাদেশ।
প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ানডে মোকাবিলা করেছিল ২০১৪ সালে। এশিয়া কাপের ম্যাচে ফতুল্লায় হেরেছিল টাইগাররা। আফগানিস্তানের করা ৬ উইকেটে ২৫৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ অল আউট হয়েছিল ২২২ রানে। এর শোধটা বাংলাদেশ তোলে পরের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম জয় আসে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের করা ২৬৭ রানের জবাবে সেই ম্যাচে আফগানিস্তান অল আউট হয়েছিল মাত্র ১৬২ রানে।
এর এক বছর পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসে আফগানিস্তান দল। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচে জয় সাত রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে হার দুই উইকেটে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল দাপট দেখিয়ে, ১৪১ রানে। মিরপুরে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি আফগানরা।
এরপর আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা হয়নি দুই দলের। তবে লড়াই হয়েছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবুধাবিতে এশিয়া কাপের দুটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল বাজেভাবে, ১৩৬ রানে। আফগানদের করা ২৫৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ১১৯ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচটি হয়েছিল বেশ হাড্ডাহাড্ডি। বাংলাদেশ জিতেছিল রোমাঞ্চ ছড়িয়ে মাত্র তিন রানে। বাংলাদেশের করা ২৪৯ রানের জবাবে আফগানরা করতে পেরেছিল ২৪৬ রান।
আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে ২০১৯ সালে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এই ম্যাচে সাকিব নৈপুণ্যে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬২ রানের ব্যবধানে। বাংলাদেশের করার ২৬২ রানের জবাবে ২০০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। ম্যাচ সেরা সাকিব। ব্যাট হাতে ৫১ রানের দারুণ ইনিংস খেলা সাকিব বল হাতে নিয়েছিলেন ১০ ওভারে ২৯ রানে পাঁচ উইকেট।
ওয়ানডেতে আফগানদের বিরুদ্ধে হার দিয়ে শুরু করলে টি-টোয়েন্টিতে ছিল ভিন্ন চিত্র। এই ফরম্যাটে দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয় ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ জিতেছিল ৯ উইকেটে। আফগানদের ৭২ রানে গুটিয়ে দেওয়া বাংলাদেশ জিতেছিল ৯ উইকেটে, ৪৮ বল হাতে রেখে।
এর পরের অধ্যায় শুধুই হারের তিক্ততায় ভরা। ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ হয় হোয়াইটওয়াশ। ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খেলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ১-১ ব্যবধানে ড্র। মিরপুরে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ২৫ রানে হারলেও চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ৪ উইকেটে। মিরপুরে তৃতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে হয় পরিত্যক্ত।
২০১৯ সালের পর বাংলাদেশের সঙ্গে এ-ই প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের। দুই দলে পরিবর্তন আছে বেশ। তবে তারকা ক্রিকেটাররাও আছেন। আফগান শিবিরে আছেন রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীদের মতো ক্রিকেটার। তবে অধিনায়কত্বে এসেছে পরিবর্তন। ওয়ানডে অধিনায়ক হাশমত শাহিদি। বাংলাদেশ দলেও পরিবর্তনের ছড়াছড়ি। সর্বশেষ সিরিজ থেকে নেই আট ক্রিকেটার। নতুন মুখ জয় ও এবাদত। অনভিষিক্ত আছেন চারজন। তামিমের নেতৃত্বে সাগরিকায় শুরু হবে ওয়ানডের লড়াই।
ওয়ানডে সিরিজের আগে সিলেটে ক্যাম্প করেছে আফগানিস্তান দল। তবে দলের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ ক্রিকেটারসহ প্রায় ১২ জন। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরিজে এর প্রভাব তেমন পড়বে না। অনেকেই সুস্থ হয়ে যাবেন এর মধ্যে। আর ব্যাক আপ খেলোয়াড়ও রয়েছে তাদের।
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে যথাক্রমে ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর মিরপুরে ৩ ও ৫ মার্চ দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। প্রায় দুই বছর পর দুই দলের মোকাবিলা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রবল আত্মবিশ্বাসী হলেও টি-টোয়েন্টিতে আছে শঙ্কা। তারপরও ঘরের মাঠে আফগানদের বিরুদ্ধে দুই ফরম্যাটেই সিরিজ জয়ে চোখ টাইগারদের। শেষটা কেমন হয়, তাই দেখার।
বাংলাদেশ ওয়ানডে দল : তামিম ইকবাল (ক্যাপ্টেন), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ, ইয়াসির আলী চৌধুরী ও মাহমুদুল হাসান জয়।
আফগানিস্তান ওয়ানডে দল : হাশমত শাহিদি (অধিনায়ক), রহমত শাহ (সহ-অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াজ হাসান, নাজিব জাদরান, শহিদ কামাল, ইকরাম আলিখিল, মোহাম্মদ নবি, গুলবাদিন নাইব, আজমত ওমরজাই, রশিদ খান, ফজল হক ফারুকি, মুজিব উর রহমান, ইয়ামিন আহমেদজাই ও ফরিদ আহমাদ মালিক।