logo
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:৫৯
সংকটে ‘ডোমারের প্রাণ’
শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী

সংকটে ‘ডোমারের প্রাণ’

দখলের কারণে অস্তিত্ব সংকটে থাকা শালকি নদী

নীলফামারী থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে ডোমার শহর। আর এই ডোমার শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে শালকি নদী; যাকে বলা হয় ‘ডোমারের প্রাণ’। তবে দখল, দূষণ আর নাব্যতা সংকটে এই প্রাণ আজ অস্তিত্ব সংকটে। দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নদীটি।

বছরের প্রতিটি দিন বহমান স্রোত ধরে রাখা এই নদীটি নাব্যতা হারিয়ে এখন কালের সাক্ষী। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভরা যৌবন হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে শালকি।

উপজেলার চিকনমাটি থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটারের শালকি মিলিত হয়েছে দেওনাই নদীতে। উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ মাথার বিভিন্ন অংশ অবৈধ দখলদারের কবলে চলে গেছে। আগের শালকি আর এখনকার শালকি দেখলে মনেই হবে না এটি একটি প্রবহমান নদী ছিল। পানিপ্রবাহ না থাকায় যেটুকু আছে, সেটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শালকির বিভিন্ন স্থান মাটি ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করেছে দখলদাররা। এতে সঙ্কুচিত হয়েছে নদীটি। কোথাও কোথাও মাটি ভরাট করে ঘর নির্মাণ, আবার কেউ দোকান আবার কেউবা ক্লিনিক হিসেবে ব্যবহার করছে। আবার প্রায় সব ক্লিনিকের ময়লা আবর্জনা ছাড়াও শহরের অনান্য ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই নদীতেই।

শালকির ওপর দিয়ে বয়ে গেছে চিলাহাটি যাওয়ার রেললাইন। নদীটি ভরাট হয়ে রেলব্রিজের কিছু জায়গার মাটি ভেঙে ধসে গিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা একটা নদী।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন স্থানে নদীটিকে দখলে নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়েছে এর আকার। কোথাও কোথাও আবার মাটি ফেলে নিজের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখলে মনে হয়, নদীটি ব্যক্তিমালিকাধীন হয়ে গেছে।

শিক্ষক জুলফিকার আলী মিঠু বলেন, ‘নদীটি সংস্কার করে দুই ধার দিয়ে ছোট রাস্তা তৈরি করলে মানুষজনের চলাচলের উপযোগী হবে। ফলে নদীটি তার সৌন্দর্য ফিরে পাবে।’

রাশেদ আলী নামে আরেকজন বলেন, ‘শালকি নদীকে বলা হয় ডোমারের প্রাণ। এই নদীকে পরিকল্পনা করে ব্যবহার করলে ডোমারবাসীকে আর পানিবন্দি হয়ে থাকতে হবে না।’

স্থানীয় সাংবাদিক রওশন রশীদ বলেন, ‘নদীটি রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। গত কয়েক বছর জেলার সব নদী খনন হলেও অজ্ঞাত কারণে এই নদীটি খনন করা হয়নি। নদীটি সংস্কার না করায় দিনে দিনে মাটি ভরাট হয়ে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নদীটি সংস্কার করা অতীব জরুরি। এর সংস্কার হলে নদীটি পানি ধরে রাখতে পারবে। আবারো হারানো গৌরব ফিরে পাবে নদীটি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারী বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘নদীটি খননের বিষয়ে আমরা ওপরে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে খননের প্রক্রিয়ায় রয়েছে শালকি নদী।’