logo
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:৪৮
পাহাড়ে মৌচাষে পথ দেখাচ্ছেন সরবিন্দু
অরণ্য জুয়েল, রাঙামাটি

পাহাড়ে মৌচাষে পথ দেখাচ্ছেন সরবিন্দু

সরবিন্দু চাকমা সরিষা ক্ষেতে কাজ করছেন

সমতল জেলার মতো নয় পাহাড়ের ভূমির ধরন ও আকৃতি। বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থার কারণে পার্বত্য অঞ্চলে সমতল জমির পরিমাণ বেশ কম। চাষাবাদ পদ্ধতিতেও আছে ভিন্নতা। যুগের পর যুগ ধরে ‘জুম চাষ’ এর ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠেছে পাহাড়ের জীবনধারা। ঘুরে ফিরে একই ঘরানার ফল-ফসল চাষাবাদ হয়ে ওঠেছে এখানকার ঐতিহ্য। বিশেষ এই ঐতিহ্য ভাঙতে আগ্রহ দেখান না তেমন কেউই।

তবে সেই ধারা ভাঙতে শুরু করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও বিসিক। তারা সমতল জেলায় সফল বিভিন্ন কৃষিপণ্যের পরীক্ষামূলক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষকদের। এতে সফলতাও ধরা দিচ্ছে উল্লেখ করার মতো।

এমনই পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি পালন ও মধু চাষ করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সরবিন্দু চাকমা (৫০) ও রবিন চাকমা (৪০)। রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়িতে চাষ করে সফলতা পেয়ে অন্য কৃষকদেরও পথ দেখাচ্ছেন তারা।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতে মৌবক্স বসিয়ে রাখা হয়েছে। মৌমাছির ঝাঁক সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌবক্সে প্রবেশ করছে। মধু রেখে আবার মধুর সন্ধানে বের হচ্ছে। প্রতিটি মৌবক্সের সামনে একটি বাটিতে রাখা হয়েছে পানি।

এ মধু সংগ্রহ করা হবে এপ্রিল অথবা মে মাসে। বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প) থেকে ৮-৯ বছর আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌমাছি পালন শুরু করেন সরবিন্দু চাকমা। পেশা হিসেবে নিয়েছেন মৌচাষ। পেয়েছেন সফলতাও। স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন সময় বিসিকের আয়োজনে মৌচাষ প্রশিক্ষণে সরবিন্দু প্রশিক্ষক হিসেবেও অংশ নেন।

সরবিন্দু বলেন, ‘আমি পেশাদার মৌচাষি। বছরের বিভিন্ন ঋতুর ফুলকে লক্ষ্য করে আমি মৌমাছির যত্ন নিই। শীত মৌসুমে শুধু সরিষা ফুলের ওপর মৌমাছি পালন করি। নিজ উদ্যোগে সরিষার ক্ষেত করি। এতে একদিকে মধু পাই, অন্যদিকে সরিষার তেল পাই। এ তেল দিয়ে আমার সারা বছর চলে, বিক্রিও করতে পারি।’

তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় সরিষার চাষাবাদ বাড়াতে পারছেন না সরবিন্দু। এজন্য সরকারি সহায়তা কিংবা সহজে ব্যাংক ঋণ সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা তার। বলেন, ‘এক কানি (৪০ শতক) জমিতে সরিষা বীজ ছিটালে ৪০ কেজির মতো সরিষা পাওয়া যায়। টাকার অভাবে সরিষা ক্ষেতের এলাকা বাড়াতে পারি না।’

‘সরকারি সহায়তা কিংবা সহজে ব্যাংক ঋণ সুবিধা পেলে এ সমস্যা থাকবে না। অন্য কৃষকরাও মধু চাষে আগ্রহী হবে’, যোগ করেন তিনি।

খাঁটি মধুর বেশ চাহিদা। আমরা মানুষকে খাঁটি মধু দিতে পারি। মৌচাক থেকে সারা বছর কম-বেশি মধু সংগ্রহ করি বলছিলেন রবিন চাকমা। সরিষার মৌসুম শেষ হলে বিকল্প উপায়ে মধু সংগ্রহ অব্যাহত রাখেন তিনি।

রবিন বলেন, ‘সরিষা ফুলের মৌসুম চলে গেলে আমরা মৌবাক্সগুলো বাড়ির আঙিনায় নিয়ে আসি। এখান থেকে মৌমাছিরা বিভিন্ন এলাকার বুনোফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। আমরাও মধুর জোগান পাই। আর্থিকভাবে লাভবান হই।’

বিসিক রাঙামাটি জেলা সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শান্তপন বড়ুয়া বলেন, একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার কাপ্তাই, সদর, রাজস্থলি ও কাউখালী উপজেলার কৃষকদের মৌচাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ প্রশিক্ষণে অংশ নেন সরবিন্দু চাকমাও। একটা সময়ে এসে অন্যরা মৌচাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও সরবিন্দু ব্যতিক্রম।

‘এখন তিনি মৌচাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিসিকের আয়োজনে মৌচাষ প্রশিক্ষণে সরবিন্দু প্রশিক্ষক হিসেবেও অংশ নেন।’

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, আমরা কুতুকছড়ি এলাকায় সরিষা ফুলের একাধিক প্রদর্শনী দিয়েছি। চাষিদের সার ও কৃষি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ প্রদর্শনীর আওতায় রবিন-সরবিন্দু চাকমা আছেন।

‘অন্যান্য সরিষা চাষিদের চেয়ে সরবিন্দুরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। মৌচাষের ওপর তাদের প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান রয়েছে। তাদের পরামর্শ নিয়ে অন্যরাও তাদের মতো লাভবান হতে পারবে’, যোগ করেন তিনি।