জলাবদ্ধতা সমস্যা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই সমস্যার কূল-কিনারা করতে না পেয়ে ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অনেক মেয়রই তাদের মেয়াদকালে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। সেই জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনসহ ৩৭ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চসিক মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ১৫ ফেব্রুয়ারি।
গত মঙ্গলবার চসিক মেয়র রেজাউল করিমের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন না হলেও প্রথম বছরে সরকারের কাছ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ আনা চসিক মেয়রের বড় অর্জন।
গত ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়।
প্রকল্পটির অধীনে চট্টগ্রাম নগরীর ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, বিমানবন্দর সড়কে ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ ও ২২টি কালভার্ট এবং ১০টি গোল চত্বর নির্মাণ করা হবে।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী একসঙ্গে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দকে চসিকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হিসেবে উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর একটি সড়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর সড়ককে শেখ হাসিনা সড়ক হিসেবে নামকরণ করে চসিকের সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সেটি পাসও করা হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওমরাহ করতে সৌদি আরব যাওয়ার আগে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এক বছরে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে ৮০ ভাগ সফল হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘অনুমোদিত আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।’
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পূর্তিতে গণমাধ্যমকে মেয়র রেজাউল করিম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, ‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চাই। অবশ্য এরই মধ্যে নাগরিকসেবা নিশ্চিতে নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ‘মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০০ দিনের অগ্রাধিকার পরিকল্পনা নিয়ে সড়ক সংস্কার, নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও মশক নিধনে কাজ করেছি। পাশাপাশি প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রণয়ন করে প্রেরণ করেছি মন্ত্রণালয়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চসিকের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের অনুমোদনও মিলেছে।এটিসহ অপেক্ষমাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে চট্টগ্রাম নগরীর।’
তিনি বলেন, ‘চসিকের প্রধান কাজগুলো নিশ্চিত করে নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। চসিককে আরো সমৃদ্ধ করার জন্যও বিভিন্ন উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। চসিক পরিচালিত মেমন মাতৃসদন হাসপাতালকে আধুনিকায়নসহ স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
এক বছর আগে চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে চসিকের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পথ অনুসরণ করবেন তিনি। গৃহকর না বাড়িয়ে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করে নগরীর উন্নয়নের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
‘কোনোভাবেই বিদ্যমান গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধু করের আওতা বাড়ানো হবে’ এই ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। যার মধ্যে চসিকের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি প্রকল্প রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ও পাউবোর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চসিক মেয়র।
সেইসঙ্গে এই চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মেয়র রেজাউল।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার পর এখানে অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে দেশের অর্থনীতির প্রাণ প্রধান সমুদ্রবন্দর আছে।
‘প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার পর এখানে টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মীরসরাইয়ে শিল্পাঞ্চলসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে চট্টগ্রামেরও গুরুত্ব দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে।’
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এক বছরে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নানা কাজ করেছেন উল্লেখ করে চসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবদুস সবুর লিটন বলেন, ‘কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে গত এক বছরে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নানা কাজ করেছেন মেয়র মহোদয়। নিয়মিত প্যাচওয়ার্ক করে শহরের ভাঙা রাস্তাঘাট সংস্কার করেছেন।
‘মশার উপদ্রব থেকে রক্ষায় কার্যকর ওষুধ ছিটানো হয়েছে। নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়েছে। শহর আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। হয়তো শতভাগ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না। তবে মেয়র এবং বর্তমান পর্ষদের কোনো কাউন্সিলরের আন্তরিকতায় একবিন্দুও কমতি ছিল না।’