logo
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:৫৩
বিপিএলের ফাইনাল, মিরপুরে ম্যাচ শুরু সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায়
কুমিল্লা-বরিশাল আগুনে ফাইনাল
মাহমুদুন্নবী চঞ্চল

কুমিল্লা-বরিশাল আগুনে ফাইনাল

একদম শেষ প্রান্তে বিপিএল। আর মাত্র একটি ম্যাচ। তারপরই পর্দা নামবে অষ্টম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচটিই বাকি। রাউন্ড রবিন লিগের অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর চারটি দল জায়গা করে নেয় প্লে অফ রাউন্ডে। এই রাউন্ডেও দেখা মিলেছে রোমাঞ্চকর কিছু ম্যাচ। চার দলের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শুক্রবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে দুই দল মুখোমুখি হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। ঠাসা উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভি।

রাউন্ড রবিন লিগ পর্বেই বরিশাল ও কুমিল্লা দেখিয়েছে তাদের দাপট। লিগ পর্ব শেষে এই দুটি দল ছিল পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে। বরিশাল প্রথম, কুমিল্লা দ্বিতীয়। সেই দুটি দলই আবার উঠে এসেছে ফাইনালে। শেষ হাসি হাসবে কে? তা জানা যাবে এদিন।

তার আগে দেখে নেওয়া যাক দুই দলের ফাইনালে আসার পথটা কেমন ছিল। রাউন্ড রবিন লিগে ১০ ম্যাচে সর্বোচ্চ সাত জয় পাওয়া দল বরিশাল। সব মিলিয়ে ১৫ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কুমিল্লা ১০ ম্যাচে জিতেছিল ছয়টিতে। পয়েন্ট ১৩। কোয়ালিফায়ার রাউন্ড থেকে শুরু এদের লড়াই। প্রথম কোয়ালিফায়ারেই বাজিমাত করে সাকিবের ফরচুন বরিশাল। হারিয়ে দেয় আগের দুবারের ফাইনালিস্টকে।

ম্যাচটি লো স্কোরিং হলেও রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল বেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৪৩ রান করেছিল বরিশাল। ফিফটির দেখা পায়নি কেউ। সর্বোচ্চ ৪৪ রান আসে তরুণ ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারের ব্যাট থেকে। গেইল করেন ২২ রান। সাকিব ব্যর্থ, ব্রাভোর ব্যাটে আসে মাত্র ১৭ রান টেস্ট মেজাজে।

এমন লো স্কোরিং ম্যাচও জিততে পারেনি কুমিল্লা। শুরুটা লিটন ও জয় ভালো করলেও শেষটা ভালো হয়নি। সাত উইকেটে কুমিল্লা থামে ১৩৩ রানে। ১০ রানের জয়ে ফাইনালের টিকিট পায় বরিশাল।

কুমিল্লা হেরে গেলেও সুযোগ থাকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে। যেখানে দলটির প্রতিপক্ষ ছিল এলিমিনেটর জয়ী চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এই ম্যাচে কুমিল্লা যা করেছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এখন পর্যন্ত বিপিএলে সবচেয়ে দাপুটে জয় ছিল সেটি। ব্যাট হাতে ওপেন করতে নেমে নারাইন গড়েন বিপিএলের দ্রুততম ফিফটি। চট্টগ্রামকে স্রেফ উড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো বিপিএলের ফাইনালে নাম লেখায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

অথচ ম্যাচটি এত এক তরফা হবে, তা ভাবেননি কেউ। আগে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স পাঁচ বল থাকতে অল আউট হয় ১৪৮ রানে। মিরপুরের উইকেটে এমন স্কোর বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে কুমিল্লার কাছে ছিল তা ডালভাতের মতো। বিশেষ করে এক সুনীল নারাইনের টর্নেডো ইনিংস ম্যাচের দৃশ্য পাল্টে দেন ভোজবাজির মতো।

আইপিএলে কলকাতার হয়ে অনেক ম্যাচে ওপেন করে নাম কুড়ানো সুনীল নারাইন এদিন কুমিল্লার হয়েও তাই করেন। লিটনের সঙ্গে নামেন ওপেন করতে। ইনিংসের প্রথম বলেই বিদায় নেন লিটন। কুমিল্লা শিবিরে বাড়ে শঙ্কা। তবে এই শঙ্কা সব উবে যায় সুনীল নারাইনের খুনে ব্যাটিংয়ে। চার ছক্কার ফুলঝুড়িতে চট্টগ্রামের বোলারদের নাভিশ^াস অবস্থা করে তোলেন তিনি। ১৩ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। যা বিপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। আগেরটি ছিল শেহজাদের, ১৬ বলে।

নারাইন যখন ফেরেন নামের পাশে ১৬ বলে ৫৭ রানের জ¦লজ¦লে ইনিংস। ৫ দশমিক ৪ ওভারে কুমিল্লার রান তখন ৭৯। নারাইনের ৫৭ রানের মধ্যে ৫৬ রানই এসেছে চার-ছক্কায়। একটি সিঙ্গেল। ছয়টি ছক্কার পাশাপাশি পাঁচটি চার হাঁকান তিন। জয়ের ভিত্তি গড়ে দেওয়া নারাইন বিদায় নিলেও শেষের দিকে ঝড় তোলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলী। ১৩ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩০ রানে। টানা দুই ছক্কায় তিনি নিশ্চিত করেন দলের জয়। তাও ৪৩ বল হাতে রেখে। সবার চোখে ম্যাচটি ছিল এক কথায় অবিশ^াস্য।

এই ফর্মটা ফাইনালে থাকলে বরিশালের জন্য আতঙ্কের নাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এটা বলা যেতেই পারে। সুনীল নারাইন, মঈন আলী, ফাফ ডুপ্লেসিস- কুমিল্লার এই তিন বিদেশি ক্রিকেটারই আছেন তুমুল ফর্মে। সঙ্গে ইমরুল-লিটন-মোস্তাফিজরা জ¦লে উঠতে পারলে শিরোপা জিততে পারে কুমিল্লাই। তবে সাকিবের বরিশালও আছে ফর্মের তুঙ্গে। টানা জয়ের ধারায় থাকা দলটি শেষ ম্যাচেই হাসতে চায় ট্রফিতে চুমু একে। এখন পর্যন্ত নিজের নামের সুবিচার করতে পারেনি ক্রিস গেইল। ফাইনালে তার দানবীয় রূপটা দেখা গেলে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিততেও পারে বরিশাল।

যদিও ম্যাচের আগের দিন বরিশালের ভক্তদের জন্য হালকা শঙ্কা বাড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। দলের অনুশীলনে ছিলেন না তিনি। যতদূর জানা গেছে, পেটের ব্যথার কারণে তিনি আসেনি। ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানেও ছিলেন না তিনি। তার বদলে দেখা যায় নুরুল হাসান সোহানকে। মিডিয়ার সামনেও কথা বলেন সোহান। কুমিল্লার হয়ে কথা বলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। দুজনের চোখই শিরোপায়। দিতে চান নিজেদের সেরাটা। হাসতে চান ম্যাচ শেষে।