logo
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৫৩
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় নাব্য সংকট
নৌ চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে তীরবর্তী মানুষ
রিপন দাস, বগুড়া

নৌ চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে তীরবর্তী মানুষ

নদীর নাব্য সংকটে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় চর জেগে উঠেছে

হিমালয় পর্বত কৈলাস শৃঙ্গে জন্ম নেওয়া নদ ব্রহ্মপুত্র। বর্তমানে এই ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা, ধরলা ও যমুনায় নাব্যতা সংকট তৈরি হয়েছে। এতে পানিপ্রবাহ কমে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক নৌরুট। এতে নদীতীরবর্তী অঞ্চলের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার নদীতীরের মানুষের আয়ের অন্যতম মাধ্যম এই নদীগুলোকে কেন্দ্র করে। প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে নদীতে পানি নেই। ফলে বগুড়ার সঙ্গে জামালপুর এলাকার মানুষের নৌপথে সময় ও খরচ দুই-ই বেড়েছে। বর্তমানে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর এক মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন নৌরুটে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাও চলছে না।

উত্তরের কুড়িগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত প্রায় ২২০ কিলোমিটার নৌপথের অধিকাংশ এলাকায় এখন ছোট-বড় অনেক চর জেগে উঠেছে।

নদীকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা জেলে সম্প্রদায়ের অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। নদীতে মাছ সংকটের পাশাপাশি পানি কম থাকায় বছরের অর্ধেক সময় কৃষিসহ নানা কাজ করেন এসব জেলে পরিবারের মানুষ। অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে দিয়েছেন বহু আগেই।

অন্যদিকে চরাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হলো কৃষি। এখানে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। পণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণের অভাবে স্বল্পদামে বিক্রি করতে হচ্ছে ভুট্টা, ডাল, মরিচসহ নানা ধরনের সবজি। নৌ চলাচল উপযোগী থাকলে আয়ের পাশাপাশি জীবনমানের অনেক উন্নতি হতো বলে জানান এসব অঞ্চলের মানুষ।

বগুড়ার সারিয়াকান্দির দেবডাঙ্গা নৌঘাটে আসা জামালপুরের মাদারগঞ্জের জালাল প্রামাণিক বলেন, ‘প্রতি বছর নদীতে পানি কমে যায়। এতে বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরে ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। পানি থাকা অবস্থায় সময় লাগত এক ঘণ্টা; আর এখন সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার বেশি।’

বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালীতলা গ্রোয়েনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যার কারণে বেশির ভাগ দোকানি অন্য পেশায় চলে গেছেন। দু-একটি খাবারের দোকান খোলা থাকলেও অন্যান্য দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব দোকান খোলা থাকে, তাদের বেচাকেনাও অনেক কম বলে জানান হোটেল ব্যবসায়ী মতিউর রহমান।

উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রাম থেকে পাবনার বেড়া পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদ আর যমুনা নদীর সব চ্যানেল চালু রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘যমুনা করিডোর নামে একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারের এই পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে একটি চ্যানেলে নিয়ে এসে দুই তীরে সুবিশাল ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’

‘পাশাপাশি পর্যটনের একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। তাছাড়া নদীকে কেন্দ্র করে বড় বড় শিল্পকারখানা গড়ে তোলারও সুযোগ সৃষ্টি হবে’, যোগ করেন মাহবুবুর রহমান।