logo
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:০০
বিস্তীর্ণ চরে ভুট্টার চাষ
সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম

বিস্তীর্ণ চরে ভুট্টার চাষ

ক্যাপশন: চরের একটি ভুট্টা ক্ষেত

কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চরগুলোতে এখন সবুজের সমারোহ। চরের বাসিন্দারা সনাতনী ফসল আবাদের পাশাপাশি এখন বাড়তি আয়ের জন্য আবাদ করছেন অর্থকরী ফসল ভুট্টার।

আগাম জাতের এসব ভুট্টা চাষে পোকার আক্রমণ এবং রোগবালাই কম থাকায় চরের কৃষকরা সাচ্ছন্দ্যে আবাদ করছেন এই ফসলটি। চরগুলোর ধু ধু বালুকনার বুক চিরে সবুজের সমারোহ প্রকৃতিকে আরো নবরূপ দান করেছে।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলার ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আগাম ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চরাঞ্চলের এসব কৃষক জানান, অল্প শ্রম, কম খরচ এবং লাভ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাদের। প্রতি শতক জমিতে প্রায় দুই মণ করে ভুট্টা উৎপাদন হয়। এতে উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয়। শুধু তা-ই নয়, ভুট্টার কাণ্ড জ্বালানি, গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে পাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ভুট্টার আটা মৎস্য খাদ্য, মুরগির খাবারসহ নানা তালিকায় রয়েছে বলে জানান তারা।

জেলার উলিপুরের সাহেবের আলগার নামাজের চরের কৃষক সামসুল মিয়া বলেন, ‘আমরা এবারই প্রথম এই চরে ভুট্টার আবাদ করতেছি। এতদিন মসলা ও বাদাম আবাদ করতাম। আশা করি ফলন ভালো হবে, লাভবান হব।’

রৌমারী উপজেলার চর গয়টাপাড়া গ্রামের ভুট্টা চাষি মুকুল মিয়া ও বাগুয়ার চর গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, ‘বন্যার পানির সঙ্গে জমিতে বালু এসেছে। ইরি-বোরো চাষ না হওয়ায় ওইসব জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে।

‘অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে জমিতে সার বেশি লাগে। কিন্তু অন্যান্য ফসল এবং ইরি-বোরো ধান চাষের চেয়ে ভুট্টার আবাদে অনেক বেশি লাভ হয়’, বলেন মুকুল মিয়া।

ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরামের ভুট্টা চাষি নির্মল চন্দ্র রায়। চাষের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভুট্টা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি। এ কারণে আমরা ভুট্টা চাষ করে আসছি। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে।’

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, ভুট্টা চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ছয় থেকে আট হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন হয় ৩৩-৩৪ মণ পর্যন্ত। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি হয় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকায়। খরচ বাদে লাভ হয় ১০-১১ হাজার টাকা পর্যন্ত।

তিনি বলেন, জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আগাম ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

‘আমরা প্রণোদনা সহায়তা হিসেবে কৃষকদের দুই কেজি করে ভুট্টার বীজ, ১০ কেজি করে এমওপি ও ২০ কেজি করে ডিএসপি সার বিনামূল্যে দিয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভুট্টার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি’, যোগ করেন উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ।