logo
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:৪৫
ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম বিন্না
এইচ এম লাহেল মাহমুদ, পিরোজপুর

ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম বিন্না

বিন্না গ্রামে তৈরি হওয়া ব্যাট

পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার বিন্না গ্রামটি এখন ক্রিকেট ব্যাট তৈরির জন্য বিখ্যাত। গত ৩০ বছর ধরে এখানে তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট ব্যাট, যা দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে খেলারসামগ্রী বিক্রেতাদের দোকানে শোভা পাচ্ছে।

বিন্না গ্রামটির অবস্থান পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা সদরের বলদিয়া ইউনিয়নের বেলুয়া নদীর পূর্বপাড়ে। এখানে তৈরি ব্যাট মানসম্মত ও কিছুটা সস্তা হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। তাইতো বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাট কিনে নিয়ে যান। আর এজন্য আগে থেকেই মোবাইলে কারিগরদের কাছে অর্ডার দেন পাইকাররা।

জানা গেছে, এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কাঠের বাজার নেছারাবাদ উপজেলাতেই অবস্থিত। মূলত প্রচুর গাছ, কাঠের সহজলভ্যতা ও শ্রমমূল্য কম হওয়ায় প্রথমে বিন্না গ্রামে ব্যাট তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। দিনে দিনে বিন্না পরিচিত হয়ে ওঠে ব্যাট তৈরির গ্রাম হিসেবে। এখন বিন্নাকে অনুসরণ করে কারখানাগুলো একে একে ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার চামী, ডুবি, আদর্শ, বয়া, পঞ্চবেকী ও আউরবুনিয়া গ্রামে। বর্তমানে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক।

ব্যাট তৈরির কারিগররা জানান, বিন্না গ্রামে সাতটি সাইজে বিভিন্ন স্তরে তৈরি হয় এই ব্যাট। প্রথমে স-মিলে সাইজ মতো গাছ কেটে ব্যাটের মূল অংশটি তৈরি করা হয়। আর তিনটি অংশ একত্রিত করে তৈরি হয় ব্যাটের হাতল। পরে মূল অংশের ত্রিকোনা আকৃতির মাঝে হাতল দিয়ে ব্যাট তৈরি করা হয়। এরপর চলে ফিনিসিংয়ের কাজ। এছাড়া লেভেলিংয়ের কাজ হয় পাইকারি বিক্রির পর। নিজ নিজ কোম্পানি তাদের স্টিকার লাগিয়ে তৈরি করে নেন দৃষ্টিনন্দন ব্যাট।

বিন্না গ্রামে তৈরি বিভিন্ন সাইজের ব্যাটের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শূন্য সাইজের ব্যাটটি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আর সবচেয়ে বড় ছয় নম্বর সাইজের ব্যাটটি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
ব্যাট তৈরির কারিগর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানার সংখ্যা আর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এ শিল্প। তবে দেশে ভারত ও পাকিস্তানের ব্যাট আমদানি বন্ধ করে এ উপজেলার ব্যাট ক্রয় করলে এই শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আমরাও লাভবান হতে পারব। এর পাশাপাশি আমাদের সরকারি আর্থিক সহযোগিতাও দরকার।’

আরেক কারিগর হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যাট তৈরি করছি। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে বড় ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারিনি। আর এর লাভ খাচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে এ শিল্প এখানে ব্যাপক প্রসার লাভ করতে পারবে।’

এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নবিব জানান, বিন্নাসহ পিরোজপুরের নেছারাবাদের ক্রিকেট ব্যাট বেশ উন্নতমানের। এ ব্যাট দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করা হয়। তারা এ ব্যাটগুলোতে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে উচ্চদামে বিক্রি করেন।

পিরোজপুরের জাতীয় দলের ক্রিকেটার ফজলে মাহমুদ রাব্বী জানান, নেছারাবাদের তৈরি ক্রিকেট ব্যাটগুলো বেশ উন্নতমানের। কারিগররা সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরো ভালোমানের ব্যাট তৈরি করতে পারবেন।

নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হক জানান, ঐতিহ্যবাহী বিন্না গ্রামে প্রায় ৩০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের ক্রিকেট ব্যাট। এ শিল্পকে আরো উন্নত করতে উপজেলা পরিষদ থেকে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।