logo
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:৫৮
সুজনের এত দাদাগিরি কেন: তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুজনের এত দাদাগিরি কেন: তথ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শুক্রবার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি- ভোরের আকাশ

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম পাঠাবে তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানানোয় বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের তীব্র সমালোচনা করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, সুজনের এত দাদাগিরি কেন?

এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীনতার পর এবারই আইন অনুযায়ী প্রথম ইসি গঠিত হচ্ছে। এ জন্য গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ কার্যদিবস।

নতুন ইসি গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটির পঞ্চম বৈঠক হওয়ার কথা আগামীকাল শনিবার ১৯ ফেব্রুয়ারি। ইসি গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রস্তাবিত ৩২২ জনের নাম গত সোমবার ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রকাশ করা হয়। একই দিন সর্বশেষ ইসির মেয়াদ শেষ হয়।

প্রস্তাবিত ৩২২ নামের বাইরেও যোগ্য ব্যক্তি বাছাই করতে পারবে ইসি গঠনে সার্চ কমিটি। সব নামের মধ্য থেকে ১০ জনের নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।

ওই ১০ জনের নাম প্রকাশে সুজনের দাবির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুজন, এরা কারা? সুজন একটি এনজিও, এই এনজিওর সারাদেশে শাখাও নাই, প্রশাখাও নাই। এরা ব্যক্তি বিশেষ নিয়ে একটা এনজিও।’

‘বিভিন্ন সংস্থা থেকে তারা তহবিল সংগ্রহ করে চলে, এমনকি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকেও তারা একসময় তহবিল নিয়েছিল। যেটি নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সুজন যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছে, আর গণমাধ্যমেও কেন এটিকে ফলাও করে প্রকাশ করা হয় সেটিও আমার প্রশ্ন?’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সার্চ কমিটি যে ১০ জন সিলেক্ট করবে, আইন বলে এটি তাদের ক্ষমতা। সেটি প্রকাশ করবে কি, করবে না- একান্ত সার্চ কমিটির ব্যাপার। সেটির জন্য সুজন বলার কে?

‘সুজন কি নির্বাচন করে? নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুজন কি স্টেকহোল্ডার? তা তো নয়। এখানে যারা নির্বাচন করেন, তারাই হচ্ছে স্টেকহোল্ডার। সুজনের এত দাদাগিরি কেন? সেটিই আমার বড় প্রশ্ন।’

স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইসি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘যে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এবং যেভাবে অংশগ্রহণমূলকভাবে এবার নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, আইন বলে সেটি অভাবনীয়।

‘৭৫ বছরের গণতন্ত্রের দেশ ভারতসহ কয়েকশ’ বছরের পুরনো গণতন্ত্রের দেশেও এভাবে করা হয় না। এখানে সবার সঙ্গে বসা হয়েছে। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকদের বিভিন্ন ফোরাম, সুজনসহ যারা টকশো করেন, তাদের সঙ্গেও বসা হয়েছে। বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীরাও সেখানে গেছেন। এরপর যে নামগুলো জমা পড়েছে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।’

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী অবশ্যই একটি নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। নির্বাচন কখনো সরকারের অধীনে হয় না, নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

‘নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো মন্ত্রী, এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও একজন কনস্টেবল বদলি করারও ক্ষমতা থাকে না। তখন সরকার শুধু রুটিন কাজ করতে পারে। সুতরাং বিএনপি যে ধোঁয়া তুলছে, নির্বাচনকালীন সবাইকে নিয়ে একটি সরকার গঠন করার, সংবিধান অনুযায়ী সেটি করার কোনো সুযোগ নাই।’

‘ষাটোর্ধ্বদের পেনশন স্কিম প্রধানমন্ত্রীরই চিন্তার ফসল’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ্ব জনগণের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন এবং কর্তৃপক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বৃহস্পতিবার গণভবনে ‘সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ বিষয়ে প্রণীত কৌশলপত্রের উপস্থাপনাকালে এই নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এই কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন।

এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ষাটোর্ধ্বদের জন্য পেনশন স্কিম প্রধানমন্ত্রীর একান্তই নিজস্ব চিন্তার ফসল। এটির জন্য বিএনপিসহ কোনো রাজনৈতিক দল কখনো দাবি করেনি, সুশীল সমাজ, রাত ১২টার পর যারা টেলিভিশনের পর্দা গরম করেন কিংবা যারা সময়ে-অসময়ে, কারণে-অকারণে জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেন তারাও বলেনি। এভাবে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশকে একটি সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চান।’

আরো পড়ুন: ষাটোর্ধ্বদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সরকার বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতাসহ দেশের তিন কোটি মানুষকে নানাভাবে ভাতা দিচ্ছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা আছে, ইউরোপেও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা নাই।

‘ষাটোর্ধ্ব সবাই যাতে পেনশনের আওতায় আসে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী দ্রুত একটি আইন প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ষাটোর্ধ্ব সবাই এটির আওতায় আসবে। বিদেশে আমাদের কর্মীরা যারা কাজ করেন, তারাও এর আওতায় আসবেন।’

‘রিজভী সাহেবরা যেই ঘণ্টা বাজাচ্ছেন, বাজাতে থাকুন’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের বিদায় ঘণ্টা বাজা শুরু হয়েছে।

সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা স্বপ্ন দেখেন ষড়যন্ত্রের, কোনো জায়গা থেকে একটা চিঠি আনলে উনারা পুলকিত হন। কোনো জায়গা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য একটা চিঠি এলে, কাউকে ধরে একটা বিবৃতি আদায় করতে পারলে উনারা পুলকিত হন। রিজভী সাহেবরা যেই ঘণ্টা বাজাচ্ছেন, সেই ঘণ্টা উনারা বাজাতে থাকুক, জনগণ আমাদের সাথেই আছে।’

বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ আরো বলেন, ‘বিএনপি তাদের নয়াপল্টনের অফিসে বারো বছর আগে থেকে আমাদের সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বাজাচ্ছে। আরো কয় বছর বাজাতে হয়, সেটা জনগণ ঠিক করবে।

‘তারা বিদায় ঘণ্টা বাজানো সত্ত্বেও জনগণ গত দুই নির্বাচনে আমাদেরকে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে, আগামী নির্বাচনেও জনগণ আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন।’