logo
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:১৮
থামানো যাচ্ছে না পোনা নিধন
মোকাম্মেল মিশু, ভোলা

থামানো যাচ্ছে না পোনা নিধন

থামানো যাচ্ছে না পোনা নিধন

ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংসকারী অবৈধ জাল উচ্ছেদে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলছে মৎস্য বিভাগের বিশেষ চিরুনি অভিযান। ৩০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া চার ধাপের এই অভিযান শেষ হচ্ছে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি। এর অংশ হিসেবে ভোলার মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদীতে পুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ জাল ব্যবহারকারীদের জেল-জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ জাল, জব্দ করা হচ্ছে মাছ ও ট্রলার। কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ জালের ব্যবহার।

অবৈধ জালে কোটি কোটি মাছের পোনা ধ্বংস হলে মৌসুমে মাছের আকাল হবে বলে মনে করছেন সাধারণ জেলেরা। তবে এসব জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস মৎস্য বিভাগের।

জেলেরা জানান, বছরের প্রথম দুই মাসে নদ-নদীতে বড় মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে দু-একটা বড় মাছের দেখা মিললেও নদীতে দেশীয় প্রজাতির মাছের (পোনা) আধিক্য থাকে বেশি। এ সময় অসাধু জেলেরা নদীতে অবৈধ জাল পেতে মাছ শিকার করেন। এসব জালে যতটা না বড় মাছ ধরা পড়ে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আটকা পড়ে নষ্ট হয় ছোট ছোট পোনা।

ভোলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোলার সাত উপজেলায় ২৫২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় আটক করা হয় ২১২ জেলেকে। জরিমানা করা হয় ৬ লাখ টাকা, মামলা হয়েছে ৯৬টি। জব্দ করা হয়েছে ৩৪০টি অবৈধ জাল, ১১ ট্রলার ও ১৩ টন জাটকা মাছ।

এতো অভিযানের পরও থেমে নেই ছোট ছোট পোনা ধ্বংসকারী অবৈধ জালের ব্যবহার। সাধারণ জেলে এবং মৎস্যজীবী সমিতির নেতাদের দাবি, চিরুনি অভিযানের মধ্যেও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা অবৈধ জাল দিয়ে কোটি কোটি পোনা ধ্বংস করছে। তাদের নির্মূল করতে পারছে না প্রশাসন।

নাছির মাঝিঘাটের জেলে শরিফ বলেন, ‘প্রশাসন অভিযান করে ঠিকই কিন্তু বাঁধাজাল, বেড়জাল, খুঁটিজাল, মশারির জাল, বেহুন্দি এগুলা না ধইরা আমাদের মতো ছোট জেলেদেরকে ধরে। এগুলা তো ক্ষমতাসীন জেলেদের তাই ধরতে পারে না।’

কাজিরহাট ঘাটের জেলে খোকন বলেন, ‘নদীতে অবৈধ যেসব জাল আছে এগুলা দিয়ে মাছের রেণু পোনা থেকে শুরু করে সব ধ্বংস হয়। অবৈধ জাল ব্যবহারকারীদের কিছু বলতে পারে না কারণ তারা এমপি-মন্ত্রীদের কাছের লোক। এ সব কারণে মাছ বড় হতে পারে না। মৌসুমের সময় মাছ থাকে না, আমরা পাইও না।’

ভোলা মৎস্যজীবী সমিতির নেতা এরশাদ বলেন, ‘সরকারের অভিযানগুলো সঠিক সময়ে পরিচালনা করতে পারলে ছোট মাছ অনেকটা রক্ষা পেত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন নদী থেকে চলে যায় তখনই অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা শুরু করে জেলেরা। ভোলা সদর থেকে চরফ্যাশন পর্যন্ত সব জায়গাতেই এই অবৈধ জাল আছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব জেলেরা আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ জাল ব্যবহার করছে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’