দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তাকে নিয়ে বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে দুদককে। এর আগে এই শরীফ উদ্দিন হাইকোর্টে দুবার তিরস্কারের মুখে পড়েছেন। সর্বশেষ তাকে চাকরিচ্যুতির ঘটনার পর সারা দেশে দুদক কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ভোরের আকাশকে বলেন, শরীফ উদ্দিনকে নিয়ে দুদক বারবার বিতর্কের মুখে পড়েছে। একবার তার বদলির বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। আরেকবার একটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা নিয়েও হাইকোর্টে তাকে তিরস্কার করা হয়।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলা আছে। এগুলো তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম এবং পেট্রোবাংলার এক প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করে আলোচনায় আসেন শরীফ উদ্দিন। এ অবস্থায় তাকে বদলির হুমকি দেওয়ার অভিযোগে থানায় জিডি করার ঘটনা ঘটে।
তবে সদ্য সাবেক এ কর্মকর্তাকে গত বছর চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলির পর তা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করা নিয়ে তিনি ভিন্নভাবে আলোচনায় আসেন। বিশেষ করে এ রিট আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ জালিয়াতির ঘটনায় তার নাম সামনে আসে। বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে অন্য ব্যক্তির রিট আবেদন দাখিল ও হাইকোর্টের ভুয়া আদেশ বানিয়ে পত্রিকা অফিসে সরবরাহ করার সঙ্গে দুদক কর্মকর্তা নিজেই সম্পৃক্ত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন আদালত।
বলেছিলেন, ‘সবকিছুর সুবিধাভোগী দুদক কর্মকর্তা। এসবের পেছনে ওই কর্মকর্তা জড়িত বলেই মনে হচ্ছে। তার কর্মকাণ্ড ভালো না। অন্যকে দিয়ে হয়তো এসব করানো হচ্ছে। তার উদ্দেশ্যসাধন করতেই এত কিছু করা হয়েছে। তাই কমিশনকে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
শরীফ উদ্দিনের বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে মানবাধিকার সংগঠনের নামে রিট আবেদন দাখিল, আদালতের ভুয়া আদেশ তৈরি ও পত্রপত্রিকায় সরবরাহের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে দুদককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। গত বছর ২৬ আগস্ট হাইকোর্টের এ আদেশের পর দুদক বিষয়টি তদন্ত করে।
জানা যায়, আদালতের অনুমতি ছাড়াই সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, কক্সবাজার শাখায় থাকা কক্সবাজারের জনৈক বেলায়েত হোসেনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেন শরীফ উদ্দিন। এ ঘটনায় বেলায়েত হোসেন হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে সেই রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত বছর ২৭ জুন বেলায়েত হোসেনের পক্ষে রায় দেন। ওই রায়ে দুদকের ব্যাপক সমালোচনা করেন আদালত। কার্যত শরীফ উদ্দিনের বেআইনি কাজের কারণে দুদককে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
এছাড়া ২০২০ সালে কক্সবাজার শহরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ওয়াসিম খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার বাসায় পাওয়া যায় ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ টাকা দুদকের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। সেসময় সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে পুরো টাকাটাই নিজের কাছে রেখে দেন শরীফ উদ্দিন। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় অনুসন্ধান হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে গত বছর ১৬ জুন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ে বদলি করা হয়। এই বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে নিজেকে কক্সবাজারের চকরিয়ার একটি মানবাধিকার সংগঠনের সভাপতি দাবি করে জনৈক শাহিদুল ইসলাম লিটন হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। এ রিট আবেদনটি হাইকোর্ট কার্যতালিকা থেকে বাদ দিলেও এ নিয়ে গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের বিভিন্ন দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীফ উদ্দিনের বদলির আদেশ দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। কোনো কোনো পত্রিকায় লেখা হয়, শরীফ উদ্দিনকে স্বপদে বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে রিট আবেদনটি আবারো কার্যতালিকাভুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফা শুনানিকালে আদেশ জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের সামনে আসে।
ওই সময় আদালত বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে সরকার যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় বদলি করতে পারেন। কিন্তু দুদকের ওই কর্মকর্তার কি স্বার্থ যে তিনি চট্টগ্রামেই থাকতে চান? বদলি হতে চান না? তার এ উদ্দেশ্য মামলার আসামিদের সুবিধা করে দেবে। এরপর আদালত রিট আবেদনটি আবারো কার্যতালিকা থেকে বাদ দিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে পটুয়াখালীতে যোগ দেন শরীফ উদ্দিন। এ অবস্থায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।