logo
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৩৪
জুনে আসছে বানান পরীক্ষার অ্যাপ ‘সঠিক’
ভোরের আকাশ ডেস্ক

জুনে আসছে বানান পরীক্ষার অ্যাপ ‘সঠিক’

অবশেষে অনলাইনে বাংলা বানান ও ব্যাকরণ ঠিক করার অ্যাপ ‘সঠিক’ আসছে এই জুনেই। এই অ্যাপের মাধ্যমে বাংলা বানান ও ব্যাকরণ শুদ্ধ করা যাবে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) বাংলা একাডেমির সহায়তায় এই অ্যাপের কাজ করছে, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

আইসিটি বাংলা ভাষা প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব করিম জানান, বাংলা অভিধান নিয়ে আরো কাজ হবে। এর মধ্যে শব্দার্থ, অনুবাদ এসব নিয়ে আলাদা প্রকল্পে কাজ হবে। তবে ‘সঠিক’ অ্যাপ আসার আগেই আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই আসছে আরেকটি অ্যাপ। যার নাম হলো বাংলা সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস অ্যাপ। যে কারো বাংলা বক্তব্য অ্যানালাইসিস করে ওই অ্যাপ বলে দেবে তার মনের অবস্থা কি।

বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ড. জালাল আহমেদ জানান, অমর একুশে বইমেলার স্টল বন্টনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে লটারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের যে অভিযোগ ছিল সেটি সম্পূর্ণ দূর হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলা বানান ও ব্যাকরণ সঠিক করার অ্যাপটি নিয়ে ২০১৭ সালে আইসিটি বিভাগ কাজ শুরু করে। তবে এর কিছু কাঠামোগত সমস্যা থাকায় ব্যবহারকারীদের জন্য প্রকাশ করতে সময় লাগছে বলে মাহবুব করিম জানান। এটা নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণ আছে। সেই পর্যবেক্ষণগুলো আমলে নিয়ে সংশোধন করা হচ্ছে। তবে এটা ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করার পর আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে এর পরবর্তী ধাপের উন্নয়ন নিয়ে কাজ হবে। তার কথায়, ভাষায় অনেক পরিবর্তন আসে। সময়ের সাথে সেগুলো যেন সময়মত আপডেট করা যায় তার ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

বাংলা অ্যাপটিতে বাংলা একাডেমির বানান রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কিন্তু বাংলা একাডেমি নিজে কোনো বাংলা অনলাইন অভিধান, বানান বা ব্যাকরণ নিয়ে কাজ করছে না। তারা আইসিটি বিভাগকে সহায়তা করছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন, অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মো. মোবারক হোসেন জানান, বাংলা একাডেমির অভিধান বিষয়ক মূল কাজ হলো আধুনিক বাংলা অভিধান। এটার নিয়মিত নতুন সংস্করণ বের হচ্ছে। এর বাইরে বাংলা থেকে ইংরেজি, ইংরেজি থেকে বাংলা, বাংলা বানান অভিধান, ব্যাকরণসহ আরো কিছু প্রকাশনা আছে অভিধান ও বিশ্বকোষ প্রকল্পে। অভিধান বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিক সর্বোচ্চ বিক্রিত বই।

তবে বাংলা একাডেমির অনলাইন কোনো অভিধান নেই। একাডেমির ওয়েব সাইটে অভিধানের পিডিএফ লিংক পাওয়া গেলেও সেই লিংক খোলা যায় না বা সেখানে অভিধানের পিডিএফ সংস্করণটি নেই।

মোবারক হোসেন জানান, আইসিটি বিভাগ আমাদের আধুনিক বাংলা অভিধান পুরোটাই নিয়ে নিয়েছে। তারা অনলাইনে বাংলা বানানের যে অভিধান নিয়ে কাজ করছে সেখানে আমাদের অভিধানই ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমাদের সঙ্গে তারা নিয়মিত বৈঠকও করছেন।

বাংলা একাডেমি নিজ উদ্যোগে বাংলার কোনো অনলাইন অভিধান করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ২০১৫ সালে অনলাইনে বাংলা অভিধান ও বানান পরীক্ষা করার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৭ সালে এটা একনেক অনুমোদন করে। সেই প্রকল্পটি এখন চলছে। বাংলা ভাষায় ১৬টি টুলস ডেভেলপ করার জন্য এই প্রকল্পটি নেয়া হয়। এটার জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।

তার মতে, এটা বেসরকারি পর্যায়ে বা বাণিজ্যিকভাবে করার সুযোগ নাই। বেসরকারি পর্যায়ে অর্থ ছাড়া কাজ করা যায় না। এটা বাণিজ্যিকভাবে করতে গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ট্রলের শিকার হতে হয়। কিন্তু টাকা আয় না হলে এটা বেসরকারিভাবে কিভাবে করা সম্ভব?

জানা গেছে, এই ১৬টি টুলসের মধ্যে আছে ১. ইউনিকোড ও বাংলা বর্ণমালার কোড সেট বিবেচনায় রেখে বাংলা সর্টিং অর্ডার নির্ধারণ, ২. উন্নয়ন বা সমৃদ্ধকরণ, ৩. বাংলা বানান ও ব্যাকরণ পরীক্ষক উন্নয়ন, ৪. বাংলা ভাষার টেক্সট টু স্পিচ ও স্পিচ টু টেক্সট সফটওয়্যার উন্নয়ন, ৫. বাংলা ফন্ট কনভার্টার উন্নয়ন, ৬. তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলার লিখিত রূপ নির্ধারণ, ৭. বাংলা মেশিন ট্রান্সলেশন, ৮. বাংলা স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার, ৯. প্রতিবন্ধিদের জন্য সফটওয়্যার, ১০. বাংলা ফন্ট এবং সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্তিকরণ, ১১. বাংলা ওসিআর উন্নয়ন প্রভৃতি।

এদিক বাংলা বানানের জন্য দেশীয় কিছু ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপ আছে। কিন্তু তার অনেকগুলো এখন আর কার্যকর নেই। আর সেগুলো বাংলাভাষীদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। ব্যবহার পদ্ধতিও বেশ জটিল।
অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা সিসটেকের এরকম বাংলা বানান পরীক্ষার একটি ওয়েবসাইট আছে। প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল বিভাগের এমডি এম রাশিদুল হাসান জানান, আমরা করেছি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য। এটা ফ্রি এবং যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন। এখানে বাংলা একাডেমির বানান অনুসরণ করা হয়েছে। তার কথা, ‘বেসরকারি উদ্যোগে বাংলার জন্য আমরা অনেক কিছু করতে চাইলেও নানা জটিলতায় তা পারা যায় না। এখন পর্যন্ত অনলাইনে বাংলায় ভালো একটি স্পেলচেকার নাই। সূত্র : ডয়চে ভেলে