logo
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:২০
পানিতে ডুবেছে ধানের ক্ষেত
কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ
এইচ আর তুহিন, যশোর ব্যুরো

কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

পানিতে ডুবে গেছে ধানের ক্ষেত

অনেক আশা নিয়ে কোমর সমান পানি সেচে বোরো ধান রোপণ করেছিলেন অর্ধশতাধিক কৃষক। আবার শতাধিক কৃষক ধান রোপণের প্রস্তুতি শেষ করেছেন। আরো দেড় শতাধিক কৃষক বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু সবার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙে আবাদের জন্য প্রস্তুত করা জমি আবার তলিয়ে গেছে। ফলে এসব কৃষকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

‘অভিশপ্ত’ ভবদহ এলাকার যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিল বোকড়ের ওপরের অংশ পাঁচকাঠিয়া গ্রামের তিন শতাধিক কৃষকের এ অবস্থা। তারা বিপুল অর্থ খরচ করে ১০৫ একর জমির একটি ছোট বিলের কোমর সমান পানি সেচে বোরো ধান চাষের উদ্যোগ নেন। ভবদহ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিল বোকড়ের অংশ ওই বিলটি।

কৃষকরা বাঁশ, বাঁশের চাটাই ও বস্তাভর্তি বালি দিয়ে বেঁধে ওই জমি সেচে পানি অপসারণ করেন। তারা একটানা ২৫ দিন সেচে বিল থেকে পানি অপসারণ করেন। এ কাজে তাদের খরচ হয়েছিল ছয় লাখ টাকার বেশি। তবে বাঁধ ভেঙে জমি আবার তলিয়ে গেছে।

কৃষক অমীয় বকসী জানান, পানি সেচে কৃষকরা বেশ আশা নিয়ে ৫০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। তিনিও প্রায় একবিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেন। এছাড়া বোরো ধান রোপণে আরো দুইবিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন।

তিনি জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঝড়ো বাতাসের কারণে বিলের অপর পাশে প্রচণ্ড ঢেউ ওঠে। ঢেউয়ের তোড়ে তাদের বেড়িবাঁধ ভেঙে আবাদের জন্য প্রস্তুত করা জমি ফের ডুবে যায়। এখন বিলে কোমর সমান পানি। নতুন করে সেচ দিয়ে বোরো ধান চাষের সময় নেই।

কৃষক পাগল চাঁন মণ্ডল বলেন, ‘আমার ওই বিলে তিন বিঘা জমি আছে। আমি পানি অপসারণের জন্য ৯ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। বাঁধ ভেঙে বিল ডুবে যাওয়ায় আমার সকল আশা ভঙ্গ হয়ে গেল।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর ওই বিল একইভাবে শুকিয়ে ধান চাষ করেছিলাম। গেল বছর যে ধান হয়েছিল তা ফুরিয়ে গেছে। এখন ঘরে কোনো খোরাকি নেই, কী খেয়ে বেঁচে থাকব ভেবে পাচ্ছি না।’

স্থানীয় হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির লিটন বলেন, ‘ওই গ্রামের ধীমান মল্লিক নামে এক কৃষক উদ্যোগ নিয়ে বিলটি সেচে শুকিয়েছিলেন। এ কাজে তার প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কৃষকরা বিঘাপ্রতি জমি বাবদ তিন হাজার টাকা দিয়ে ওই বিলে ধান চাষ করবে- এমন চুক্তি ছিল।

‘কেউ কেউ টাকা দিয়েছেন। আবার বিল ডুবে যাওয়ার কারণে এখন অন্যরা আর টাকা দিচ্ছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন ধীমান মল্লিক।’



ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে কৃষকরা উপেক্ষাকৃত ডাঙ্গা এলাকার বিলগুলো সেচে শুকিয়ে বোরো আবাদ করছেন। আবার কোথাও এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভবদহ অঞ্চলে প্রায় ৫২টি ছোট বড় বিল আছে। বড় বিলগুলো হচ্ছে- বিল বোকড়, বিল খুকশিয়া, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল ডুমুর, বিল পায়রা ও দামুখালীর বিল। এসব বিলে অথৈ পানি। মাঝারি নিচু বিলে কোমর সমান পানি।

এলাকার কৃষকরা নিজেদের টাকায় পাম্প বসিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিল সেচে রোবো আবাদ করছেন। অনেক বিলে ধান রোপণের পর রোপণকৃত ধানের চারা পাশের পানির চাপে তলিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে সারাক্ষণ পাম্প লাগিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।