পূর্ব ইউক্রেইনের দনবাস অঞ্চলের দোনেস্ক ও লুহানস্ক থেকে প্রায় ৭ লাখ মানুষকে রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষনা করছে রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
ইতোমধ্যেই ইউক্রেইনের বিচ্ছিন্ন ওই অংশ দুটি থেকে বাসে করে বেসামরিক সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে তারা।
স্বঘোষিত ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ দোনেস্ক ও লুহানস্ক শুক্রবার ওই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। এই ঘোষণায় বলা হয়েছে, প্রথমে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়া হবে।
কোনো তথ্য প্রমাণ হাজির না করে দোনেস্কর বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ডেনিশ পুশিলিন বলেছেন, ইউক্রেইন শিগগিরই এই দুই অঞ্চলে হামলা চালাবে এবং হামলা মোকাবেলায় তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
লুহানস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারাও বলেছেন, হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ইউক্রেইন গোলা ছোড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেইন বলেছে, বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ওই দুই এলাকায় হামলার কোনো পরিকল্পনা এখন তাদের নেই। বিদ্রোহী নেতাদের ভাষ্যকে ‘রাশিয়ার অপপ্রচার’ আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুয়েলবা।
দনবাস অঞ্চলের বেশিরভাগ বাসিন্দাই রুশভাষী, তাদের অনেকেই এর মধ্যে রাশিয়ার নাগরিকত্বও পেয়ে থাকতে পারেন বলে ধারনা রকা হচ্ছে।
ইউক্রেইন বলছে, দোনেস্ক ও লুহানস্কের শাসকরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়, রাশিয়ার ‘প্রক্সি’। তাদের এ ভাষ্য প্রত্যাখ্যান করে আসছে ক্রেমলিন।
পূর্ব ইউক্রেইনে শুক্রবার টানা দ্বিতীয় দিনের মত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলা বিনিময় হয়েছে।
অন্যদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ওই দুই এলাকায় কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। তাদের সরিয়ে আনাও হবে কঠিন কাজ। তাদের গণহারে সরিয়ে নেওয়ার কোনো ইংগিত এখনও মেলেনি।
তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ওই এলাকা থেকে কয়েকটি বাসে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার খবর দিয়েছে।
ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দোনেস্কে বাসে ওঠার জন্য অনেক পরিবার নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলোতে জড়ো হওয়ার শুরু করেছে বলে খবর গণমাধ্যমের।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে যারা রাশিয়ায় যাচ্ছে, তাদের জন্য সীমান্তের কাছে ক্যাম্প খোলার এবং জরুরি সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
প্রতিবেশী ইউক্রেইনে হামলা চালানোর পরিকল্পনার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমা সরকারগুলো বলছে, ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে কোনো ধরনের ‘নাটক’ সাজানোর পরিকল্পনায় আছে রাশিয়া, যাতে হামলার জন্য একটা ‘অজুহাত’ পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে মস্কো, যাদের মধ্যে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রাশিয়ার সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধারাও আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও এত বেশি সৈন্য সমাবেশ ঘটায়নি রাশিয়া। আর এই বাহিনীর অর্ধেকই ‘অ্যাটাক পজিশনে’, অর্থাৎ হামলার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, বলে ভাষ্য মার্কিন কর্মকর্তাদের।
আল জাজিরা থেকে অনূদিত