জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই মডেল কলেজ। এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে ৫১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয় শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পরীক্ষায় এ সাফল্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি। কিন্তু বেতন না পেয়ে অর্থকষ্টে ভুগছেন এই কলেজের ২৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরের মাত্রাই মডেল কলেজটি ১৯৯৯ সালে স্থাপিত হয়। কলেজটি পাঠদানের অনুমতি পায় ২০০৬ সালে। তখন থেকে সুনামের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জেলার গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষা প্রসাওে ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরেও কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
নিভৃত পল্লী এলাকায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাবিব তালুকদার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর প্রশাসনিক জটিলতার পাশাপাশি তৎকালীন বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের রোষানলে পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ফলে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে উচ্চ আদালতে মামলার মাধ্যমে ২০০৬ সালে পাঠদানের অনুমতি পায় কলেজটি। আর একাডেমিক স্বীকৃতি মেলে ২০১০ সালে।
এলাকার শিক্ষানুরাগী ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে কলেজটি পরিচালিত হয়ে আসছে। কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বেতন না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামের ৫১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫১ জনই পাস করেছে। বিগত কয়েক বছর এ কলেজে পাসের হার খুবই সন্তোষজনক।
এলাকার ২২৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে কলেজটিতে। যাদের পাঠদানের পাশাপাশি বিশেষ কোচিংয়ের ব্যবস্থাও অব্যাহত রাখেন শিক্ষকরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রভাষক রাশেদুল হক হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু যোগদানের পর থেকে কলেজ থেকে কোনো বেতন না পেলেও ভবিষ্যতের আশায় তিনি কলেজটি আঁকড়ে ধরে আছেন। কলেজ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় তার সংসার চলছে প্রাইভেট পড়িয়ে। কলেজে ক্লাস নেওয়ার অবসরে জয়পুরহাট শহরে টিউশনি করে কোনোরকমে সংসার নির্বাহ করছেন।
কলেজের সহগ্রন্থাগারিক আব্দুল লতিফ বিনা বেতনে কলেজের চাকরি করতে গিয়ে নিস্ব হয়ে পড়েছেন। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী এবং দুই ছেলে-মেয়ের মুখের আহার জোগাতে সিএনজি চালানোর কাজ করছেন। কলেজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে সিএনজি চালিয়ে চলছে তার সংসার।
কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মান্নান এবং আমিরুলের জীবন এখন চলছে দিনমজুরির টাকায়। বড় আশা নিয়ে কলেজে কর্মচারীর চাকরি নিলেও কোনো বেতন জোটেনি তাদের ভাগ্যে। তাই তো বেছে নিয়েছেন দিনমজুরির পেশা। বিনা বেতনে ১৫ বছর ধরে শ্রম দিয়ে আসছেন তারা।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুব হাসান বলেন, ‘কলেজটি চালাতে গিয়ে আমরা প্রায় নিস্ব হয়ে পড়েছি। শ্রমের পাশাপাশি প্রতি বছর শিক্ষকদের টাকা দিয়ে চলছে কলেজটি। তারপরও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি পরীক্ষার আগে অন্তত ছয় মাস ধরে কোচিং চালু রাখা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা এবারও শতভাগ পাস করেছে।’ ১৫ বছর বিনা বেতনে কেউ কাজ করে কিনা এমন প্রশ্ন তার।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাত্রাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আ.ন.ম শওকত হাবিব তালুকদার বলেন, ‘তৎকালীন জোট সরকারের স্থানীয় সাংসদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এক একর জায়গার ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নিভৃত পল্লী এলাকার অবহেলিত জনপদে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এতে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটছে।’
তিনি কলেজটি এমপিও করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।