logo
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:৩০
মরিচ চাষে কমছে আগ্রহ
রিপন দাস, বগুড়া

মরিচ চাষে কমছে আগ্রহ

একজন কৃষক মরিচ শুকাচ্ছেন

বগুড়া দিয়ে বয়ে গেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ নদী যমুনা। এ নদীর আববাহিকায় জেলাটিতে জেগে ওঠেছে বিভিন্ন চর। সেসব চরে চাষাবাদ করেই চলে অনেকের জীবন। এসব চরে চাষ হয় বিভিন্ন ফসলের; যার মধ্যে অন্যতম মরিচ।

সারাদেশে বগুড়ার মরিচের সুনাম রয়েছে বহু বছর ধরে। চরাঞ্চলে এখন সব ধরনের ফসল উৎপাদন হলেও অন্যতম অর্থকরী ফসল হলো মরিচ। তবে চলতি বছরে জেলাটিতে কমেছে মরিচ চাষ। অন্যান্য ফসল চাষে বেশি লাভ হওয়ায় মরিচ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। এমনকি চরের পাশাপাশি সমতল এলাকাতেও এবার মরিচ চাষে আগ্রহ নেই তাদের। আর যতটুকু চাষ হয়েছে সেখানেও ফলন কম। উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে নানা শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

বগুড়ার কাঁচা মরিচের পাশাপাশি শুকনো মরিচ জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন বড় বড় মসলা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোতে। আর এই কারণেই জেলার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় গড়ে ওঠেছে কয়েকশ চাতাল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ ফসলের আবাদ ও ফলন দুই-ই কমে যাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও। উৎপাদন খরচ বেশি ও ফলন কমে যাওয়ায় হতাশায় কৃষক।

গত বছর প্রতিবিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ কাঁচা মরিচ উৎপাদিত হলেও এক বছরের ব্যবধানে কমেছে বিঘাপ্রতি গড়ে ২০ মণ। বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর ময়ুরের চর এলাকার কৃষক আবু সাঈদ (৬৫)।

তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘গত বছর একই সময়ে কাঁচা মরিচের যে দাম ছিল সেটা এবার অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর উৎপাদন খরচ বেড়েছে দিগুণ। গত বছর শুকনো মরিচ বিক্রি হয়েছিল ছয় থেকে আট হাজার টাকা মণ দরে। এ বছর সেই মরিচ পাঁচ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।’

চরের পাশাপাশি বিভিন্ন হাট থেকে শুকনো মরিচ কিনে বড় বড় কোম্পানিগুলোতে সরবরাহ করেন একই উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মরিচ ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান বুলবুল।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রতি মণ শুকনো মরিচ সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে পুরোদমে কেনাবেচা শুরু হবে আরো ২০-২৫ দিন পরে। আর তখন কিছুটা দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর চাতালে গত বছরের মরিচ এখনো রয়েছে। আর সে কারণে এবার পুরো মৌসুমেও শুকনো মরিচের দাম বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বগুড়ায় চলতি বছরে ৫৩ হাজার ২৫০ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে সাড়ে ৮ হাজার বিঘা কম। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার মণ। তবে মরিচের চাষ কম হওয়ায় ফলনের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার ফলে ঘাটতি হতে পারে এক লাখ সাড়ে ৭ হাজার মণ।

তবে কৃষি বিভাগের হিসাব অনুসারে, এবার মরিচ চাষের জমি কমলেও ফলন ভালো হয়েছে। আর দামও গত বছরের মতই।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. দুলাল হোসেন বলেন, এবার মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ ছয় থেকে আট হাজারে বিক্রি হচ্ছে।

কেন মরিচ চাষের জমি কমছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবজি ও ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে পরিশ্রম এবং খরচ দুই-ই কম হওয়ায় এসব চাষে বেশি আগ্রহ চাষিদের।’