ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক। বিশেষ করে ক্রিকেটের বাকি দুই ফরম্যাটের চেয়ে। আর সিরিজ যদি হয় ঘরের মাঠে, তাহলে জয়ের সম্ভাবনা থেকে অনেক বেশি। সেই হিসেবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজে আত্মবিশ^াসী তামিম ব্রিগেড। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে টাইগারদের চোখ শুধুই ট্রফিতে। হোয়াইটওয়াশের চিন্তা এখনো মাথায় নেই। আপাতত সিরিজ জয়ে মন তামিমদের।
রোববার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছে বিকেলে কঠোর অনুশীলন করে বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দল। কোভিড পজিটিভ থাকায় দলের সঙ্গে চট্টগ্রাম যেতে পারেননি ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। বিপিএল ফাইনাল খেলা সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মাহমুদুল হাসান জয়, মোস্তাফিজুর রহমানদের দেওয়া হয়েছে একদিন বাড়তি বিশ্রাম।
চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে কথা বলেন দলের স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিম্পল প্ল্যান থাকবে, যেটা সবসময় করে আসছি, ওয়ানডে ক্রিকেট যেভাবে খেলে আসছি, সেভাবেই খেলব। হোয়াইটওয়াশ বলা যাবে না কিন্তু আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। এবং অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য সিরিজ জেতা। প্রথম লক্ষ্য আপাতত তাই। ব্যবধান ৩-০ হলে আরো ভালো।’
রোববার এই সিরিজের জন্য টাইটেল স্পন্সরের নাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বাংলাদেশ-আফগান সিরিজের টাইটেল স্পন্সর হয়েছে ইস্পাহানি লিমিটেড। সঙ্গে পাওয়ার স্পন্সর হয়েছে ওয়ালটন গ্রুপ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া কনফারেন্স রুমে সিরিজের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে টাইটেল স্পন্সর আর পাওয়ার স্পন্সরের নাম ঘোষণা করে বিসিবি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু, টাইটেল স্পন্সর ইস্পাহানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) ওমর হান্নান, পাওয়ার স্পন্সর ওয়ালটন গ্রুপের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক ও সিএমও মো. ফিরোজ আলমসহ অন্যরা।
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ওয়ানডেতে আফগানদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি পরের দুই ওয়ানডে। তিনটি ওয়ানডেই চট্টগ্রামে। এরপর দুই দল ফিরবে ঢাকায়। ৩ ও ৫ মার্চ হবে দুই ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজ, ভেন্যু মিরপুর।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হয়েছে মোট ৮ ম্যাচে। জয়ের পাল্লা ভারি বাংলাদেশের, ৫টি। হার ৩টি। তবে টি-টোয়েন্টিতে হিসাব ভিন্ন। ছয়বারের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জয় সাকুল্যে ২টি, হার ৪টি। তার মানে, এই ফরম্যাটে বরাবরের মতো পিছিয়ে বাংলাদেশ।
প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ানডে মোকাবিলা করেছিল ২০১৪ সালে। এশিয়া কাপের ম্যাচে ফতুল্লায় হেরেছিল টাইগাররা। এর শোধটা বাংলাদেশ তোলে পরের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথম জয় আসে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের করা ২৬৭ রানের জবাবে সেই ম্যাচে আফগানিস্তান অল আউট হয়েছিল মাত্র ১৬২ রানে।
এর এক বছর পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসে আফগানিস্তান দল। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচে জয় সাত রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে হার দুই উইকেটে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল দাপট দেখিয়ে, ১৪১ রানে। মিরপুরে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি আফগানরা।
এরপর আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলা হয়নি দুই দলের। তবে লড়াই হয়েছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবুধাবিতে এশিয়া কাপের দুটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল বাজেভাবে, ১৩৬ রানে। আফগানদের করা ২৫৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ১১৯ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচটি হয়েছিল বেশ হাড্ডাহাড্ডি। বাংলাদেশ জিতেছিল রোমাঞ্চ ছড়িয়ে মাত্র তিন রানে। বাংলাদেশের করা ২৪৯ রানের জবাবে আফগানরা করতে পেরেছিল ২৪৬ রান।
আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে ২০১৯ সালে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এই ম্যাচে সাকিব নৈপুণ্যে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬২ রানের ব্যবধানে। বাংলাদেশের করা ২৬২ রানের জবাবে ২০০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। ম্যাচ সেরা সাকিব। ব্যাট হাতে ৫১ রানের দারুণ ইনিংস খেলা সাকিব বল হাতে নিয়েছিলেন ১০ ওভারে ২৯ রানে ৫ উইকেট।
২০১৯ সালের পর বাংলাদেশের সঙ্গে এ-ই প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের। দুই দলে পরিবর্তন আছে বেশ। তবে তারকা ক্রিকেটাররাও আছেন। আফগান শিবিরে আছেন রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীদের মতো ক্রিকেটার। তবে অধিনায়কত্বে এসেছে পরিবর্তন। ওয়ানডে অধিনায়ক হাশমত শাহিদি। বাংলাদেশ দলেও পরিবর্তনের ছড়াছড়ি। সর্বশেষ সিরিজ থেকে নেই আট ক্রিকেটার। নতুন মুখ জয় ও এবাদত। অনভিষিক্ত আছেন চারজন। তামিমের নেতৃত্বে সাগরিকায় শুরু হবে ওয়ানডের লড়াই।