logo
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:৪১
৪১ ভাষার মধ্যে ১৪টি বিপন্ন
আরিফ সাওন

৪১ ভাষার মধ্যে ১৪টি বিপন্ন

বিপন্ন ভাষা সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। ছবি- সংগৃহীত

দেশে বর্তমানে বাংলাসহ ৪১টি মাতৃভাষা রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ভাষাই বিপন্ন। বিপন্ন ভাষা সংরক্ষণে কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। বিপন্ন ভাষা সংরক্ষণে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পাঠানো ভাষা গবেষণা নীতিমালা শিক্ষামন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষা। সেখান থেকে ছাড় মিললে গবেষণার মাধ্যমে বিপন্ন ভাষা বিলুপ্তির আগে সংরক্ষণ করার দ্বার খুলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া বাংলা ভাষাকে দেশে দেশে ছড়িয়ে দিতে এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টদের অনেকে। যদিও অনেক আগে থেকেই দাবি ওঠে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষা বিস্তৃতির।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি কঠিন। তবে সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় এটা করা যেতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের উদ্যোগে ‘বাংলা ভাষা’র ওপর লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এটা তারা তাদের স্বার্থেই করছেন।

কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ করতে সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করা যেতে পারে। এতে ভাষার চর্চা যেমন বাড়বে তেমনি বাংলা ভাষা জন্মের ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা স্পষ্ট হবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) মো. শাফীউল মুজ নবীন বলেন, ‘দেশে দেশে ভাষার বিস্তারে একটা আন্তর্জাতিকীকরণের ব্যাপার আছে। অর্থবিত্ত দিয়ে ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ করা যায় না।

যদি তাই করা যেত তাহলে চায়না করতে পারত। চায়নার যে অর্থ এই অর্থ পৃথিবীর আর কারো নেই। চায়না কি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে? পারেনি। টাকা থাকলে সব হয় না। বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে চায় না। কিন্তু কিছু লোক চায়না শিখছে।’

মো. শাফীউল মুজ নবীন বলেন, ‘আগে যে ভাষাগুলো নানা দেশে ছড়িয়ে গেছে, আমার যে ধারণা সেখানে কলোনি স্থাপন ঘটেছিল। প্রধানত আমি মনে করি এটা। অন্যান্য সমাজ বা দেশগুলো খুবই পশ্চাৎপদ ছিল। অর্থনৈতিক দিক থেকে বুদ্ধির দিক থেকে; ইউরোপিয়ান ধারণার চেয়ে তারা পিছিয়ে ছিল।

‘এসব নানা কারণে আমাদের এখানে হয়তো ইংরেজির একটা সমাদর হয়েছে। আমরা কলোনিতে পড়েছিলাম। আমরা যদি ফ্রেন্স কলোনিতে হইতাম। তাহলে কি আমরা ইংরেজি শিখতাম। আমরা ফরাসি শিখতাম। তাই ঘটেছে। আফ্রিকায় তাই ঘটেছে। ফলে অন্যান্য ভাষা বিস্তারের ক্ষেত্রে কলোনি একটা বড় বিষয়।’

এই সময়ে আমাদের ভাষা অন্য দেশে ছড়িয়ে দেওয়া অনেক বড় কঠিন কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু পারে বাংলাদেশের মানুষ। তারা যদি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করে তারা হয়তো পারবেন, এক-একজন ব্যক্তির মধ্য দিয়ে যদি কিছু ছড়ায়। তবে আমরা যদি একটা উদ্যোগ নিতে পারি সেটা ভালো। এখনো হয়নি।

‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যদি এমনও করতে পারি। চায়নার ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা নিজ উদ্যোগে বাংলা শিখছে। তার কারণ হচ্ছে- আমার মনে হয় চায়নার বড় একটা বাণিজ্যিক বাজার বাংলাদেশ। এ কারণেই তাদের কিছু বাংলাভাষী মানুষের প্রয়োজন। ওরা বিভিন্ন ভাষা শিখবে। ওদের বাণিজ্যিক কারণে। আমরা কি সেই অবস্থানে যেতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘কত জনসংখ্যা ওই ভাষায় কথা বলে এর ওপর নির্ভর করে এটা কি বিপন্ন না কি বিলুপ্ত তা ঠিক করা যায়। ওই ভাষার জনগোষ্ঠীর কেউ যদি না থাকেন তখন ওটা বিলুপ্ত ভাষা। বিপন্ন অবস্থায় ভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হয়।’

বিপন্ন ভাষা রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে মো. শাফীউল মুজ নবীন বলেন, ‘কেউ হয়তো গিয়ে ভাষা রক্ষা করতে পারেন না। আবার পারেনও। এ জন্য ওই জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। একা এই প্রতিষ্ঠান পারবে না। অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন যারা আছে। সবাই মিলে সম্মিলিত প্রয়াসে এটা হতে পারে।’

তিনি বলেন, অনেক ভাষা আছে তার বর্ণলিপি নেই। শুধু কথা বলা হয়। বাংলায় যদি লেখা লেখি না হয়, তাহলে বাংলা কী টিকবে। এটা কিন্তু একটা ব্যাপার। অন্য কেউ লেখক তৈরি করে দিতে পারবে না। লেখক হবে ওই জনগোষ্ঠীর কেউ। লিখতে গেলে লেখা হবে? এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ।

একটি গবেষণা নীতিমালা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গবেষণা নীতিমালাটা অনুমোদন হয়ে এলে কেউ কেউ যদি আগ্রহী হন তখন প্রজেক্টভিত্তিক গবেষণা যদি শুরু হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ আছে। অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন পেলে বড় একটা কাজের সুযোগ তৈরি হবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক (লাইব্রেরি ও আর্কাইভ) নাজমুন নাহার বলেন, ভাষাবিজ্ঞানের অনুযায়ী হবে। ওটি আলাদা ভাষা কি না, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। সেটা অন্য ভাষার একটা অংশও হতে পারে। নোয়াখালীর ভাষাও বাংলা ভাষা, চিটাগং-এর ভাষাও বাংলা ভাষা। এগুলোরও কিন্তু একটা শ্রেণি আছে। অনেকে দাবি করেন মনিপুরীদের দুটো আছে। তারা বলেন আলাদা। ভাষাবিদরা স্বীকৃতি দেন না, আলাদা ভাষা।