করোনা পরিস্থিতির কারণে দ্বিতীয় ধাপে এক মাস বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) খুলেছে দেশের মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেণিকক্ষ।
এদিন সকাল থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আবারও সশরীরে ক্লাস চালু হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
আগামী ২ মার্চ খোলার কথা সব প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
মাধ্যমিকের যেসব শিক্ষার্থী করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে, শুধু তারাই সশরীরে ক্লাস করতে পারছে। কারণ ১২ বছরের বেশি বয়সী অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেনি। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীর বয়স এখনো ১২ বছরের কিছু কম।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ জানিয়েছেন, ষষ্ঠ শ্রেণির যেসব শিক্ষার্থীর বয়স এখনো ১২ বছর হয়নি, তারা আপাতত অনলাইনেই ক্লাস করবে। এই বয়সী শিক্ষার্থী দুই-তিন লাখ হতে পারে। দুয়েক মাসের মধ্যে তাদের বয়স ১২ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেনি, তারা আপাতত অনলাইনে ক্লাস করবে।
দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (১২ বছরের বেশি বয়সী) মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ। মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের প্রায় সবার প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থী।
করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ১৮ মাস পর গত সেপ্টেম্বরে কিছু নির্দেশনা মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়।
মঙ্গলবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চলবে সে বিষয়ে ২০ দফা নির্দেশনা জারি করেছে মাউশি।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. কোডিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন/ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণ করা অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে।
৬. শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন আগের নির্দেশনা মেনে প্রণয়ন করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশ/প্রস্থান মুখ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা। একটি প্রবেশ/প্রস্থান মুখ থাকলে একাধিক প্রবেশ/প্রস্থান মুখের ব্যবস্থার চেষ্টা করতে হবে।
৮. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে, সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং দিতে হবে।
১০. একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।
১১. সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ ও আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
১২. সব ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১৩. প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ অন্য কেউ প্রবেশ/অবস্থান/প্রস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
১৪. সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. শ্রেণিকক্ষে বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং কোথাও পানি না জমা নিশ্চিত করা।
১৮. প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে।
১৯. স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০. ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।