পূর্ব ইউক্রেনে শান্তি রক্ষার কথা বলে রুশ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার এ নির্দেশ দেওয়ার আগে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন তিনি। মস্কোর এমন পদক্ষেপে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন কাউকে কিছু ছেড়ে দেবে না। তারা মোটেই ভীত নয়। এদিকে শান্তি রক্ষার নামে রুশ সেনা পাঠানোর নির্দেশকে পুতিনের ইউক্রেন দখলের কৌশল বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। তবে সবপক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সোমবার রাতে টেলিভিশনে এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। পুতিন বলেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল রাশিয়ার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইউক্রেনের সত্যিকারের জাতিরাষ্ট্র হওয়ার কোনো ইতিহাস নেই।
পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে ২০১৪ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন সেখানকার স্বাধীনতাকামীরা। এরপর থেকেই ওই দুই অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে। এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রুশপন্থী হিসেবেই পরিচিত।
ভাষণে পুতিন তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ওই দুই ‘প্রজাতন্ত্রের’ সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার নির্দেশ দেন। এর আগে পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ডিক্রিতে সই করেন পুতিন। ডিক্রি অনুযায়ী, ওই দুই অঞ্চলে রুশ সেনারা শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি মস্কো। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুতিনের নির্দেশের পর ট্যাংকসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ওই এলাকায় প্রবেশ করেছে। দোনেৎস্ক এলাকায় পাঁচটি ট্যাংক এবং শহরের অন্য এলাকায় আরও দুইটি ট্যাংক দেখা গেছে।
সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া দেড় লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করে। আর মহড়ার নামে কৃষ্ণসাগরে মোতায়েন করা হয় যুদ্ধজাহাজ। এমন পরিস্থিতে রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। হোয়াইট হাউস বারবারই বলে আসছে, যেকোনো সময় ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে পারে রাশিয়া। যদিও মস্কো বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
তবে যুদ্ধ এড়াতে ফ্রান্স-জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও প্রস্তাব দিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার। তবে সব প্রচেষ্টার গোড়ায় পানি ঢেলে দিলেন পুতিন।
পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে পুতিনের নির্দেশের পর ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন মোটেই ভীতসন্ত্রস্ত নয়। দেশটি কাউকে কিছু ছেড়ে দেবে না।
এদিকে পুতিনের এমন নির্দেশের পর জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমসা গ্রিনফিল্ড বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘শান্তিরক্ষী’ মোতায়েন ‘বাকোয়াজ’। এটা রাশিয়ার কৌশল। তিনি বলেন, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া রাশিয়ার ফের ইউক্রেন দখলে নেওয়ার অজুহাত। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে এমনভাবেই ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় পুতিনের সেনাবাহিনী।
পুতিনের পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোরি শাস্তি হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র: বিবিসি ও সিএনএন।