logo
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:০৫
আলোচনা সভায় পররাষ্ট্র সচিব
ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগেই বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগেই বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি- ভোরের আকাশ

পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগে আজ বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 
 
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
 
রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ ১৯৫২ এর সবক ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তাদের আত্মত্যাগেই আমাদের মাতৃভাষার অধিকার, আমাদের পরিচয় এবং নিজস্ব সংস্কৃতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই আমাদের সব যুগান্তকারী আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে এবং অবশেষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি।’
 
মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সব ভাষা সৈনিকের অবদানের কথাও পররাষ্ট্র সচিব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
 
মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যগণ এবং জাতীয় চার নেতাসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের সবার আত্মত্যাগেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। 
 
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রথম সুসংগঠিত আন্দোলন, যা আমাদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করে জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত করেছিল।’
 
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর মাধ্যমে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তার নির্দেশনা এবং নেতৃত্বে এই গৌরবময় স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি একইসঙ্গে এই স্বীকৃতি অর্জনের জন্য তৎকালীন কানাডা প্রবাসী জনাব রফিক, জনাব সালামসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা, বিশেষ করে, প্যারিসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত (এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্ত) প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর অবদানের কথা কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
 
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাবেক কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর ছেলে সৈয়দ নাজিব মুস্তাফা আলী। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা নিজেদের মাতৃভাষায় অনুভূতি প্রকাশ করে ভাষা শহীদদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাদের প্রদত্ত বাণী অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
 
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে বাংলাদেশ মিশনসমূহের প্রধানগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
 
এর আগে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ শোভাযাত্রাসহ ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।