জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর শুধুই টি-টোয়েন্টির আগুন ছিল। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পর আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ। সেখান থেকে ফেরার পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সঙ্গে টেস্ট সিরিজ। এরপর নিউজিল্যান্ড গেলেও সেখানে শুধুই টেস্ট সিরিজ। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে সিরিজ এর মধ্যে ছিল ব্রাত্য।
দীর্ঘ প্রায় সাত মাস পর ওয়ানডে ফরম্যাটে ফিরছে বাংলাদেশ দল। বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। লড়াইটা হবে ভালো। ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ে চোখ বাংলাদেশের। তবে দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে সিরিজে ফিরতে পেরে দলের সবাই বেশ খুশি। সঙ্গে রোমাঞ্চিতও। মঙ্গলবার এমনটিই জানান বাংলাদেশ কাপ্তান তামিম ইকবাল। শুরুটা ভালো করতে মরিয়া টাইগার ক্যাপ্টেন।
গত বছরের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের মাটিতে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশ জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে। ঘরের মাঠে সর্বশেষ সিরিজ এর মাস দুয়েক আগে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে।
অনেক দিনের বিরতির পর এবার ঘরের মাঠে আফগানদের বিরুদ্ধে সিরিজ। দলের সবাই রোমাঞ্চিত। গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, ‘গত জুলাইয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলাম। ৬ থেকে ৭ মাস পর এসেছি। সবাই রোমাঞ্চিত। দ্বিধাহীনভাবে এটা আমাদের প্রিয় ফরম্যাট। এ বছর বেশ কয়েকটা ওয়ানডে আছে। গত বছর এভাবে ছিল না। কালকের জন্য মুখিয়ে আছি। আশা করছি ভালো শুরু পাব।’
আফগানদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি সিরিজও খেলবে বাংলাদেশ। শুরুটা ওয়ানডে দিয়ে। সেটাই যথার্থ বলে মনে হচ্ছে তামিমের, ‘ওদের সঙ্গে ওয়ানডে দিয়ে শুরু করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত। ওয়ানডেতে অবশ্যই আমরা ভালো দল। ছন্দে ফেরাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই খেলার মধ্যে আছে, এটা ইতিবাচক। দল হিসেবে ভালো করতে হবেÑ এটাই। ওয়ানডেতে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই ভালো করেছি। তারা ভালো দল এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানসম্পন্ন বোলিং আক্রমণ আছে তাদের। তবে এই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেই আমরা আগে ভালো করেছি। কাল যারা খেলবে ব্যাট হাতে সবাই ছন্দে আছে।’
আফগানদের বোলিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে তামিম বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো বোলারকে নিয়ে বেশি কথাবার্তা বলতে চাই না। যেটা বললাম, তাদের বোলিং অনেক ভালো, সম্ভবত সেরা স্পিন অ্যাটাক তাদেরই। কিন্তু এদের বিপক্ষেই আমরা অতীতে অনেক ভালো করেছি, বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে। আবার কেন করতে পারব না? প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে। আপনারা তিনজনের নাম বলেছেন, কিন্তু তারা বল করবে ৫০ ওভার। বাকি যে দুজন বল করবে তারাও ভালো। শুধু তিনজনকে নিয়ে চিন্তা করলেই হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সহজ বোলার আপনি খুব কমই পাবেন। ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ সবসময়ই থাকে। এক দল হয়ত স্পিনে ভালো, আরেক দল হয়ত পেসে। আমাদের মানিয়ে নিয়ে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে হবে।’
বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার কেমন হবে। বিশেষ করে পাঁচ নম্বরে। অভিষেক হতে পারে ইয়াসির অথবা জয়ের। এ প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ‘গত ৬ ওয়ানডেতে একজনই তিন নম্বরে ব্যাট করেছে। নম্বর থ্রি নিয়ে আমি বেশি উদ্বিগ্ন নই। নম্বর ফাইভ নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা অবশ্যই ছিল। ইয়াসিরকে নেওয়া হয়েছে, জয়কেও নেওয়া হয়েছে। আমাদের হাতে অপশন আছে। এখানে যথার্থ একজনকে পেলে আমাদের জন্য খুবই ভালো। কখনো দ্রুত রান তুলতে হতে পারে, কখনো দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে পুরো ইনিংস ধরে রাখতে হতে পারে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা ভালো করছে তাদের আমরা সুযোগ দিচ্ছি।’
হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে আছেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। সিডন্স এক সময় বাংলাদেশের হেড কোচ ছিলেন। দুজনের রসায়ন সবে শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ‘রাসেল ও জেমি... আমরা একটা দল। রাসেল হেড কোচ হয়ে সেই দলের অংশ। জেমি ব্যাটিং কোচ হয়ে এই দলের অংশ। আমার মনে হয় না এটা আমরা আলাদাভাবে চিন্তা করছি বা দেখার দরকার আছে। যারা এই সেটআপে আছে, তারা মিলেই বাংলাদেশ দল। ম্যানেজমেন্ট বলুন, খেলোয়াড় বলুন, আমরা সবাই এক। এভাবেই আমরা এগোতে চেষ্টা করব। দূরত্ব থাকলে ভালো কিছু হবে না। খেলোয়াড়-স্টাফ আমরা সবাই জানি আমরা একটি দল। ভালো খেলি খারাপ খেলি, একসঙ্গেই থাকব আমরা।’
জেমির অন্তর্ভুক্তি দলের জন্য ভালো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তামিম। তিনি বলেন, ‘জেমি বাংলাদেশে অনেক বড় প্রভাব রাখতে পারে। তার যে অভিজ্ঞতা আছে বা তার সঙ্গে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা আমাদের আছে... আমরা সিরিজের মধ্যে আছি তাই এই সময়টা ওর জন্য একটু কঠিন। কমবেশি যতটুকু পারছে চেষ্টা করছে। তবে আমি নিশ্চিত তরুণরা ওর কাছ থেকে অনেক উপকৃত হবে। আমি সবসময় একটা কথা বলি, একটা কোচ ১০টা অপশন দেবেন, আপনার বুঝতে হবে কোন ২-৩টি আপনার কাজে লাগবে। সবকিছু শুনলে কাজ না-ও হতে পারে। নিজের দায়িত্বে বুঝতে হবে কোনটা কাজে লাগবে, আপনি সিনিয়র জুনিয়র যে-ই হন।’
সাগরিকার উইকেট নিয়ে তামিম বলেন, ‘চট্টগ্রামের উইকেট তো সাধারণত ভালোই হয়। বিপিএলেও ভালোই ছিল। স্পোর্টিং উইকেট আশা করছি, যেখানে পেসার, ব্যাটার সবার জন্য সহায়তা থাকবে। (ম্যাচ শুরুর সময়) ১১টার সময় আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজও খেলেছি। শিশিরের একটা প্রভাব আছে। এটার কথা মাথায় রেখে এই জিনিসটা করা।’
তিন ম্যাচ সিরিজে লক্ষ্য কী, ৩-০? তামিম বলেন, ‘৩-০ এখনো অনেক দূরের ব্যাপার। আমরা কালকের ম্যাচ কীভাবে শুরু করি এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কে চাইবে না ৩-০ না করতে? ওরাও চাইবে। তবে দূরেরটা চিন্তা না করে আমরা আগে কাল শুরু করি। শুরুটা ভালো করা গুরুত্বপূর্ণ।’