logo
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:২৩
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা আন্দোলনের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস, মিশন, হাইকমিশন ও কনস্যুলেট। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।

এছাড়া শহীদ মিনারে বাংলাদেশে দায়িত্ব প্রাপ্ত বিদেশী কূটনীতিকরাও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডিন ও ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি’র নেতৃতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কূটনীতিকরা। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডেলিগেশন প্রধান ও অন্যান্য দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, মিশন প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৭ থেকে জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘ সদরদফতরে টানা ৬ষ্ঠ বারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। এবারও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে ইভেন্টটির আয়োজন করে এলসালভাদর, নাইজেরিয়া, পর্তুগাল ও শ্লোভাকিয়া মিশন। এতে সহ-অংশীদারিত্ব করে জাতিসংঘ সচিবালয় ও ইউনেস্কো। জাতিসংঘ সদরদফতরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিশেষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি। দিবসটি উপলক্ষে শুভেচ্ছাবাণী দেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ও নিউইয়র্ক সিটির মেয়র।

জাতিসংয়ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, বক্তারা নিজ নিজ মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখতে পারেন সেজন্য এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের ছয়টি অফিশিয়াল ভাষায় গোটা অনুষ্ঠানটি অনুবাদের সুব্যবস্থা রাখা হয়। বাংলাদেশের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন এর শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম সঙ্গীত-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি..’ একাধিক ভাষায় উপস্থাপন করা হয়।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বায়ান্নর ভাষা শহীদ এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

সাধারণ পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য বক্তাগণ জাতিসংঘে বহুভাষাবাদ ও মাতৃভাষার প্রচারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার অগ্রগতিতে প্রযুক্তির সম্ভাবনাময় ভূমিকা এবং প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার কথা তুলে ধরেন তারা। নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা বলতে গিয়ে বক্তাগণ বিলুপ্তির পথে থাকা ভাষার সংরক্ষণের গুরুত্বও তুলে ধরেন।

মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন প্রধান চার্লস হোয়াইলি, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসনসহ অন্যান্যরা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন সারা বিশ্বের মানুষের জন্যই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। সোমবার সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।

পরবর্তী পর্বে দূতাবাস মিলনায়তনে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহীদ মিনার বেদীতে পুস্পাস্তবক অর্পণ করা হয়। প্রথমে রাষ্ট্রদূতদের নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পুস্পাস্তবক অর্পণ করেন। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক ও অন্যান্য অতিথিগণ প্রভাতফেরীর মাধ্যমে শহীদ মিনার বেদীতে পুস্পাস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান।

অনুষ্ঠানে শহীদ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। পরে রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানরা সকলের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য তুলে ধরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। একই সঙ্গে রাষ্ট্রদূত মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির মর্যাদা রক্ষায় সকলকে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।