logo
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:২৭
দুর্নীতির মামলায় বাছিরের ৮ বছর, মিজানের ৩ বছর কারাদণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির মামলায় বাছিরের ৮ বছর, মিজানের ৩ বছর কারাদণ্ড

রায়ের পর খন্দকার এনামুল বাছির। ছবি- ভোরের আকাশ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পুলিশ বাহিনী থেকে বরখাস্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছরের এবং দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে রায় পড়া শুরু হয় আলোচিত এ ঘুষের মামলায়।

উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিজান ও বাছিরকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়, নিরাপত্তা জোরদার করা হয় আদালতপাড়ায়।

মামলায় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন, ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালত সোয়া এক ঘণ্টা ধরে এ রায় দিয়েছেন। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কাঠগড়ায় কাঠের টুলে বসে রায় শোনেন মিজান ও বাছির।

আদালত ঘুষের মামলায় মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। আর বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ৩ বছর ও মানি লন্ডারিংয়ের ৪(২) ধারায় ৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বাছিরের মোট আট বছরের কারাদণ্ড হলেও দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে। এজন্য তাকে ৫ বছর কারাভোগ করতে হবে। বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডও দিয়েছেন আদালত।

 

রায় উপলক্ষে আদালতে আনা হয় মিজানুর রহমানকে। ছবি- ভোরের আকাশ

গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখ ধার্য করেন আদালত।

ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তদানীন্তন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে।

মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বাছির এমন অভিযোগ তোলেন স্বয়ং মিজান। এসময় ঘুষ বিনিময়ের কথোপকথনের রেকর্ডও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এরপর বরখাস্ত করে গ্রেপ্তার করা হয় দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে।

২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষের মামলাটি করেন। গ্রেপ্তার হন ডিআইজি মিজানও। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার বাদী।

ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর আদালত অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য করে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বদলির আদেশ দেন।

 

ডিআইজি মিজান ও দুদক কর্মকর্তা বাছির (ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে উভয়ই বরখাস্ত)

২০২০ সালের ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার অভিযোগ পত্রে থাকা ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

মামলায় গত ৩ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন মিজানুর রহমান এবং এনামুল বাছির। এরপর তারা ১২ জানুয়ারি আসামিদের লিখিত বক্তব্য জমা দেন।

সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুই আসামির উপস্থিতিতে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালত দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ তারিখ ধার্য করেন।

সেদিন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল গণমাধ্যমকে বলেন, দুদক অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।

ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও বাছিরের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান দাবি করেছেন, দুদক অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই তারা খালাস পাবেন।

প্রসঙ্গত ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটির বিচার কাজ চলছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড, সঙ্গে আসামিদের জরিমানা করারও বিধান রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, অর্থ পাচারের সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছরের কারাদণ্ড। সঙ্গে পাচার করা টাকা বাজেয়াপ্তসহ জরিমানার বিধান রয়েছে।

 

আরো পড়ুন: মিজান-বাছিরের ঘুষের মামলা: ফেব্রুয়ারিতেই রায়ের আশা আইনজীবীদের