logo
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৫:৪১
অনলাইন জুয়ায় এক বছরে পাচার ৩০ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক

অনলাইন জুয়ায় এক বছরে পাচার ৩০ কোটি টাকা

অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে (বেটিং) সাইট থেকে অবৈধভাবে আয় করা প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছেন একটি চক্রের সদস্যরা।

গত এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার এই টাকা লেনদেন হয়েছে।

ডিবি প্রধান বলছেন, বেটিং সাইট থেকে অবৈধভাবে আয় করা এসব অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদও গড়ে তোলেন তারা। আর চক্রের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন সদস্যের সহায়তায় বেটিং

পরিচালনার এসব অর্থের লেনদেন করা হতো মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে (ই-ট্রানজেকশন)।

আজ বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

এর আগে, গত শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়া (বেটিং) চক্রের বাংলাদেশের মাস্টার দুই এজেন্ট তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৮), রানা হামিদ (২৬) ও তাদের

সহযোগী সুমন মিয়াকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৬-০৩৫১ নম্বর প্লেটের একটি প্রাইভেটকার,

নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ৫টি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক একাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিপিএল, আইপিএলসহ অন্যান্য ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সক্রিয়ভাবে চলছে অনলাইন জুয়া (বেটিং)। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত

www.mazapbu.com I www.betbuzz365.live নামক বেটিং ওয়েব সাইটের সুপার এজেন্টরা বাংলাদেশে নিয়োগ করে মাস্টার এজেন্ট। সুপার এজেন্টরা প্রতিটি পিবিইউ (ভার্চুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকায় বিক্রি করে। আর

দেশিয় মাস্টার এজেন্টরা লোকাল এজেন্টদের কাছে তা বিক্রি করে ১০০ টাকায়। ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় নিয়োগ করা হয় লোকাল এজেন্ট। তারা আবার লোকাল জুয়াড়িদের কাছে পিবিইউ বিক্রি করে দেড়শ টাকায়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার তরিকুল ইসলাম বাবু ও রানা হামিদ বাংলাদেশের মাস্টার এজেন্ট। তারা সুমন মিয়া, পলাতক আসামি সাথী আক্তারসহ অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০-৬০ জনের সহায়তায় ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে

অনলাইনে জুয়া (বেটিং) খেলার সাইট পরিচালনা করে আসছিল। তারা বেটিং সাইট থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মিলেছে।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ও পলাতকরা অবৈধ জুয়ার (বেটিং) সাইট পরিচালনা করে মোবাইল ব্যাংকিং/ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন (ই-ট্রানজেকশন) করেছে। এখানে কারেন্সি হিসাবে পিবিইউ এক প্রকার সাইটের

নিজস্ব ভার্চুয়াল কারেন্সি ব্যবহৃত হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ গ্রেপ্তারদের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিল।

ভুয়া ফেসবুক আইডির কথা তুলে ধরে হাফিজ আক্তার বলেন, সিয়াম (ঝরুধস ধযসবফ) ও আলী (অষর কযধহ) ছদ্মনামে দুটি ফেক ফেইসবুক আইডি রয়েছে। যার মাধ্যমে এজেন্টরা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে।

বেটিং সাইটগুলো গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও তাদের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০-৬০ জনের পারস্পরিক যোগসাজশে পরিচালিত হয়।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস নাই। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, জব্দকৃত ব্যাংক একাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক একাউন্টগুলোতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর প্রায়

২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে দেশের বাইরে।

হাফিজ আক্তার বলেন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতে এর এডমিন রয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বন্ধ করতে গেলে তারা অন্য সাইটে চলে যাবে। আমরা বিটিআরসির মাধ্যমে এক সঙ্গে

কাজ করব। মনিটরিং আরো বাড়াতে হবে। তবে সামাজিকভাবে এটা প্রতিরোধে কাজ করা উচিত। কারণ যারা বেটিং এ অংশ নেয় তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এটা নেশার মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ জড়িতদের আইনের

আওতায় নিয়ে আসা।

তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিনদিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।