logo
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৫৪
হাওয়ায় মিশে যায়নি ‘হাওয়াই মিঠাই’
আছাদুল ইসলাম আসাদ, জয়পুরহাট

হাওয়ায় মিশে যায়নি ‘হাওয়াই মিঠাই’

বয়োবৃদ্ধ আবুল কাশেম হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছেন

‘হাওয়াই মিঠাই’ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি মিঠাইয়ের নাম। হাওয়ার সঙ্গে এই মিঠাই নিমিষে বিলীন হয়ে যায় বলেই এর নাম হাওয়াই মিঠাই। পেট ভরে না এ মিঠাইয়ে, তবে খেতে মিষ্টি। মুখের স্বাদ মেটায় শুধু।

দেখতে অনেক বড়সড় মনে হলেও নিমিষেই এটি মুখের ভেতর এসে গলে যায়। তবে নিমিষে মিশে যাওয়া এ মিঠাই এখনো হাওয়ায় মিশে যায়নি। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার কাছে এটি এখনো জনপ্রিয়।

এক সময় পাড়া-গ্রামে ঘণ্টার টুং টুং শব্দ বাজিয়ে শিশু-কিশোরদের জানান দিয়ে বিক্রি হতো হাওয়াই মিঠাই। ঘণ্টার আওয়াজ শুনেই দৌড়ে গিয়ে শিশু-কিশোররা হাওয়াই মিঠাই কিনে মুখে পুড়ত। তবে আগের মতো দেখা মেলে না এ মিঠাইয়ের। যদিও বিভিন্ন দিবস ও গ্রামীণ মেলায় এখনো বিক্রি হতে দেখা মেলে। শিশু-কিশোরদের কাছে এ মিঠাইয়ের কদর এখনো কমেনি।

গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে জয়পুরহাট শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানের প্রধান সড়কে দেখা মেলে এক হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আবুল কাশেমের সঙ্গে। তার কাঁধে একটি টিনের বাক্স। ওই বাক্সের তিন দিকে কাঁচ দিয়ে ঘেরা আর একদিকে টিন লাগানো। বাক্সের ভিতরে থরে থরে সাজানো কিছুটা লাল ও গোলাপি রঙের হাওয়াই মিঠাই।

বিক্রেতা বয়োবৃদ্ধ আবুল কাশেম জানান, হাওয়াই মিঠাই ব্যবসার সঙ্গে এক সময় তার মতো অনেকেই জড়িত ছিল। যুগের বদলে অনেকেই অন্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তবে আবুল কাশেম এখনো এ ব্যবসা আঁকড়ে ধরে রয়েছেন।

তিনি আরো জানান, তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জে। এখন থাকেন পার্বতীপুরে। সেখানকার একটি ছোট কারখানা থেকে হাওয়াই মিঠাই পাইকারি কিনে বিক্রি করেন বিভিন্ন শহর আর গ্রামে।

হাওয়াই মিঠাই বেশি বিক্রি হয় জাতীয় দিবসের দিনগুলোসহ গ্রামীণ মেলায়। অল্প পুঁজিতে কাশেমের আয় দিনে চার থেকে ৫০০ টাকা। এতেই চলে তার সংসার।

আবুল কাশেম বলেন, ‘১৪-১৫ বছর বয়স থেকে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছি। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলেও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয় না এমন নয়। তবে মুখে দিলে নিমিষেই শেষ হয়, এমন কারণে কেউ কেউ পাঁচ টাকা পিস দামটা বেশি মনে করে কিনতে চান না।

‘চিনির দাম বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে এ মিঠাইয়েরও। খুব বেশি লাভ না হলেও সংসার চলার মতো আয় হয় এ ব্যবসা থেকে’, বলেন আবুল কাশেম।

দীর্ঘদিনের বিক্রির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘আগে চালের দাম কম ছিল। গ্রামের ছেলেমেয়েরা বাড়ির আবাদের চাল দিয়ে হাওয়াই মিঠাই কিনে খেত। এখন আর কেউ চাল দিয়ে কিনে খায় না। এখন টাকা দিয়ে কেনে।’

শহরের জানিয়ার বাগান এলাকার কিশোর তাওহীদ বলে, হাওয়াই মিঠাই খেতে খুব মজা, কিন্তু মুখে দিতেই নেই। তখন আবারো খেতে ইচ্ছে হয়।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের দেওগ্রামের অছিম উদ্দীন (৬৯) বলেন, ‘আগে গ্রামগঞ্জের মেলায় হাওয়াই মিঠাই প্রচুর দেখা যেত, বিক্রিও হতো। এখন সেভাবে আর হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালাকে দেখা যায় না। এখনকার অনেক ছেলেমেয়েই হাওয়াই মিঠাই খায়নি। এমন কি দেখেনিও।’