logo
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২০:১৪
মণিপুরি ঐতিহ্য জাদুঘর
পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার

মণিপুরি ঐতিহ্য জাদুঘর

কমলগঞ্জে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা মণিপুরিদের জাদুঘর

পর্যটন অধ্যুষিত এলাকা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। ফলে এখানে নানা সংস্কৃতির এক অনন্য বৈচিত্র্যময় আবহ বিরাজ করে। মণিপুরি, গারো, ত্রিপুরা, মুন্ডা, খাসিয়া, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এই উপজেলায়।

এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে মণিপুরিদের সংখ্যা বেশি। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষাশৈলী ও বিশাল ইতিহাস। আছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। মণিপুরিদের তৈরি তাঁতশিল্প সমাদৃত বিশ্বব্যাপী। তাদের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, যুদ্ধ-বিগ্রহের নানা উপকরণের সমন্বয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে এই এলাকায় গড়ে উঠেছে মণিপুরি জাদুঘর।

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ছনগাও গ্রামের হামোম তনু বাবু নিজ বাড়িতে এই জাদুঘর গড়ে তুলেছেন। তিনি ২০০৬ সালে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি মিউজিয়াম’।

মণিপুরিদের প্রাচীন বিলুপ্তপ্রায় সামগ্রীসহ প্রায় তিন শতাধিক উপকরণ স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরটিতে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন অবলোকন করতে। জাদুঘরে স্থান পাওয়া তিন শতাধিক উপকরণের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে এই সংগ্রহশালা অনন্য বলে মনে করছেন নৃ-তত্ত্ব গবেষক ও দর্শনার্থীরা। এটি ক্ষুদ্র একক নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেশের একমাত্র জাদুঘর দাবি করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা।

জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা মণিপুরি লেখক ও গবেষক হামোম তনু বাবু বলেন, ‘প্রথমে এক-দুটো উপকরণ সংগ্রহ করে রাখতাম। পরে নিজের বাড়িতে একটি কক্ষে শুরু করি সংরক্ষণ। এখন আমার বাড়ির চারটি কক্ষজুড়ে সাজানো আছে বিভিন্ন উপকরণ।’
তিনি জানান, দুইশ’ বছর আগের ব্যবহৃত কয়েন, মণিপুরি মহাকাব্যের নায়ক-নায়িকার ছবি এবং যুদ্ধবিগ্রহে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ রয়েছে এই জাদুঘরে। তাছাড়া প্রাচীন ঐতিহ্য ও নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে মণিপুরিদের আদি ধর্ম দেবতাদের পরিচিতি। আছে মণিপুরি নারীদের ব্যবহারের বিভিন্ন ধরনের গয়না, সাজসজ্জার উপকরণ। প্রাচীন কাঁসা পিতলের কলস, জগ, মগ। বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী। রয়েছে কাপড় বুননের প্রাচীন সরঞ্জামও। এছাড়াও এখানে স্থান পেয়েছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত উপকরণ ও প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, বাস্তবিক অর্থে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মণিপুরিদের এমন একটি সংগ্রহশালা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাছাড়া দায়বদ্ধও তৈরি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, এখানে সব জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও অধিকার সংরক্ষণে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।’