টিকা গ্রহণের পর মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হওয়া সেই অ্যান্টিবডি হ্রাস পেতে থাকে। ছয় মাস পরে অধিকাংশেরই অ্যান্টিবডি হ্রাস পায়। হ্রাস পাওয়া অ্যান্টিবডি পুনরায় বৃদ্ধি করে বুস্টার ডোজ। এমন প্রমাণ পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষক দল।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এ গবেষণার ফল প্রকাশ করেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। ‘হেমাটোলিজক্যাল প্যারামিটারস অ্যান্ড অ্যান্টিবডিজ টিটার আফটার ভ্যাকসিনেশন অ্যাগেইনস্ট সার্স কভ-২’ শীর্ষক গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ছিলেন ২২৩ জন।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, গবেষণায় দুই ডোজ টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার এক মাস পর, দুই ডোজ টিকা গ্রহণের ছয় মাস পর এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণের এক মাস পর শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার এক মাস পর এবং এর মধ্যে ৩০ জনের দুই ডোজ টিকা গ্রহণের ছয় মাস পর ও বুস্টার ডোজ গ্রহণের এক মাস পর অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণকারী পূর্ব থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, হাঁপানিসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। তবে এ ধরনের রোগের কারণে অ্যান্টিবডি তৈরিতে কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী টিকা গ্রহণের পরে মৃদু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছিলেন, তবে রক্ত জমাট বাঁধা বা অন্য কোনো জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গবেষণাকালীন পরিলক্ষিত হয়নি।
টিকা গ্রহণের পর প্রথম ধাপে ২২৩ জনের মাঝে ৯৮ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। যারা আগেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল। টিকা গ্রহণের ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে দেখা যায়, অধিকাংশের ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন টিকা গ্রহীতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশের অ্যান্টিবডির মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, গড় অ্যান্টিবডির মাত্রা ৬৭৯২ AU/mL থেকে ৩৯৬৩ AU/mL তে নেমে এসেছে। এ সময় দুজন টিকা গ্রহীতার দেহে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি।
বুস্টার গ্রহণের পরে শতভাগ অংশগ্রহণকারীদের দেহেই অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় এবং প্রায় সবার ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডির মাত্রা পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে গড় অ্যান্টিবডির মাত্রা ২০৮৭৮ AU/mL-এ এসে দাঁড়ায়। রক্তের প্যারামিটারগুলোতে (হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেটসহ অন্যান্য) উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।
এই গবেষণা থেকে টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায় উল্লেখ করে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বুস্টার ডোজ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা যাচাই এর জন্য সমসাময়িক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকাদানের উদ্দেশ্য হলো মানবদেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা- যা ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার এবং আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতার সম্ভাবনা কমায় বলে পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে। পাশাপাশি গবেষণালব্ধ ডেটায় দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যায়, আবার বুস্টার ডোজের মাধ্যমে পুনরায় কোভিডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারির বিপর্যয় প্রতিরোধের উদ্দেশে সারা বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ এবং সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ এবং ৩০ লাখের বেশি মানুষ টিকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।
এই গবেষণা কার্যক্রমটিতে হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ সহ-গবেষক হিসেবে এই গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
গতকাল বুধবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।