# মে মাসের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করতে চায় # ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন # পরিবর্তন আসতে পারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে # পরিচ্ছন্ন নেতাদের নিয়ে দ্বাদশ নির্বাচনী প্রচারণা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জাতীয় সম্মেলন করতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এর আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের সম্মেলন আগামী মে মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ জানাতে চিঠি ইস্যু করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। এ নিয়ে কাজ করছেন আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাঠপর্যায়ে সম্মেলন শেষ করে জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দল গোছানোর কাজটি চ্যালেঞ্জিং হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব নিয়েই জাতীয় নির্বাচন করতে চায় দলটি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে দল। সম্মেলনে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়া হবে। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে দলের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। যা জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মানুষকে জানান দিতে জাতীয় নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগে থেকে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সারা দেশে ক্যাম্পেইন করারও চিন্তা করছে দলটি।
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতৃত্ব খুঁজছে ক্ষমতাসীন দল। যারা নানা কারণে জেলা-উপজেলায় অভিমান করে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন তাদের আবারো দলে নতুন করে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী ছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অন্যান্য পদে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে শুরু করে প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা পর্যায়ে পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রের ব্যাপারে সবকিছু নির্ভর করছে দলপ্রধান শেখ হাসিনার ওপর।
প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা পেশার জনপ্রিয় ব্যক্তিরা রাজনীতিতে নিজেদের যুক্ত করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সংগীতশিল্পী, নায়ক-নায়িকা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, অভিনয়শিল্পীসহ বিভিন্ন সেক্টরের পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। এই আদলে নতুন নেতৃত্ব আনতে চায় আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবারের দলের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে পারে পরিচ্ছন্ন ইমেজের নতুন নতুন মুখ। ইতোমধ্যে দলপ্রধানের নির্দেশে তারা মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করারও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। নানা কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত করে হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে সতর্ক অবস্থানে চলার চেষ্টা করছেন। যেন সম্মেলনের আগে নিজেকে নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি না হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশ জেলা সম্মেলনই বাকি রয়েছে। উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে ৬৫০টি। এর মধ্যে ৪৫০টির কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব কমিটির মধ্যে কোনো কোনোটির ৮, ১০ বছর বা দুই যুগও পার হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি কমে আসায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান দলীয় নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল অব. ফারুখ খান বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান আছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের ৮টি বিভাগীয় টিম সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। যেখানে যেখানে সম্মেলন করার প্রয়োজন সেখানে শিগগিরই আমরা সম্মেলন করে ফেলব।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দলের সাংগঠনিক কাজ আগেই গুছিয়ে রাখতে চান তারা। এর অংশ হিসেবে প্রথমেই দলের জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সেসব জায়গায় তারা দ্রুত সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এপ্রিলে যেহেতু রোজা শুরু হচ্ছে তাই ২১ ফেব্রুয়ারি পর থেকে এই কার্যক্রম শুরু করে আগামী মে মাসের মধ্যে শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী বছর ডিসেম্বর অথবা পরের বছর জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলের জাতীয় সম্মেলনের পর এই এক বছর নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম চালাতে চায় আওয়ামী লীগ।
দলটির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তিন বছর অন্তর সম্মেলনের সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সম্মেলনের আগে মাত্র তিনটি জেলা সম্মেলন হয়। তখন অধিকাংশ জেলারই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এরপর ২০২০ সালের শুরুতে সব পর্যায়ে সম্মেলনের কাজ শুরু করলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় দুই বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম অধিকাংশ সময়ই বন্ধ এবং কখনো সীমিত পরিসরে চলে। যার ফলে সম্মেলন কার্যক্রম পুরোপুরি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এর মধ্যেও কয়েকটি জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে কিছু সম্মেলন করা হয়েছে।
দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, সম্মেলনের জন্য সরাসরি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ, বৈঠক হচ্ছে। আবার ডিজিটাল পদ্ধতিতেও করা হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমরা ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করব, আবার সরাসরি তো হবেই। করোনা পারিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিক হয়ে আসছে, আগামী মে মাসের মধ্যে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির জাায়গায় সম্মেলন শেষ করার চেষ্টা চলছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দলের সব পর্যায়ে যোগ্য সংগঠক, সৎ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এ ধরনের ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ এবং উপজেলার কাউন্সিল সম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের একটি চিঠি খুলনা বিভাগের চার জেলা বরাবর ইস্যু করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- মাগুরা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা। এই চার জেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। একইসঙ্গে জেলার অন্তর্গত মেয়াদ উত্তীর্ণ সব উপজেলা ও পৌর শাখার কাউন্সিলের তারিখও নির্ধারণ করা হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের ১৩মাস পর ৯৩ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গত ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ১৯ বছর পর গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগজ্ঞ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন।