logo
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৯:২২
শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ টিকাযাত্রা
অরণ্য জুয়েল, রাঙামাটি

শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ টিকাযাত্রা

ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে করে শিক্ষার্থীদের টিকাকেন্দ্রে হাজির করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ

পাহাড়ি সর্পিল পথে দাপুটে যানবাহন হিসেবে বেশ নাম আছে চাঁদের গাড়ির (জিপ)। গণপরিবহণের অপ্রতুলতার সুযোগে গাড়ির ভেতরে, চালকের পাশে, পা-দানি এমনকি ছাদেও যাত্রী বহনে পটু এর চালক-হেলপার। ১২ জনের বসার স্বাভাবিক ব্যবস্থা থাকলেও ৩০ থেকে ৩৫ জন নিয়ে দিব্যি চলাচল করে এ বাহন। এতে পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সঙ্গে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে।

এমন ঝুঁকি সত্ত্বেও রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ও দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের বেশকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ খরচ বাঁচাতে এই পথেই হেঁটেছেন। করোনার টিকা নিতে কয়েকশ শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে টিকাকেন্দ্রে হাজির করেছেন তারা। বাদুরঝোলা হয়ে অনেকটা ভয় নিয়েই গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কড়া রোদে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক শিক্ষার্থীই বিগড়ে গিয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গেও করেছে অনেকেই খারাপ আচরণ। হিমশিম খেতে হয়েছে টিকা সংশ্লিষ্টদেরও।

বাঘাইছড়ির ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে মাধ্যমিক, নিম্নমাধ্যমিক, দুটি দাখিল মাদ্রাসা এবং দুটি কলেজসহ মোট ৩১ টি প্রতিষ্ঠানের আট হাজার শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বয়স কম হওয়ায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী বাদ পড়ছে এ কার্যক্রম থেকে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত হাজার ৬৬৪ জন শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ ও পাঁচ হাজার ১৪৮ জন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছে। তবে বয়স ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় ৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরো প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী বাদ পড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘ঝুঁকি আছে সত্য। কিন্তু উপায় ছিল না। যাতায়াত খরচ কমাতে জিপ গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে।’

টিকা কার্যক্রমে যুক্ত রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক আহসান উল্লাহ বলেন, ‘অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অস্থির হয়ে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। তারপরও আমরা সেবা অব্যাহত রেখেছি।’

টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. রনি আলম বলেন, ‘একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও সকল শিক্ষার্থী যাতে টিকা পায় সেদিকে কড়া নজরদারি রেখেছি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মামুন বলেন, ‘বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টিকা সংরক্ষণের উপযোগী ছিল না। ১৪৪ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটি জেলা সদরে গিয়ে টিকা নিতে নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে শিক্ষক ও অভিভাবক মহলে হতাশা দেখা দেয়। তবে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার ও জেলা পরিষদ থেকে এ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বয়সজনিত কারণে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী টিকা নিতে পারছে না। দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের টিকা নিতে কিছুটা কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।’