logo
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৯:৪০
অলিকে আস্থায় আনতে জোর প্রচেষ্টা বিএনপির
এম সাইফুল ইসলাম

অলিকে আস্থায় আনতে জোর প্রচেষ্টা বিএনপির

দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি যে ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের মাধ্যমে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের কথা ভাবছে সেখানে অলি আহমেদ জোরালো ভূমিকা রাখবে বলেও আশা বিএনপি নেতাদের।

# সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে ভুল বোঝাবুঝির অবসান # মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতি বিএনপির

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদকে আস্থায় আনতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। বিভিন্ন সময়ে অলি আহমেদের প্রতি নানা অবিশ্বাস তৈরি হওয়া বিএনপি এখন তাকে মূল্যায়নের কথাও ভাবছে।

দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি যে ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের মাধ্যমে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের কথা ভাবছে সেখানে অলি আহমেদ জোরালো ভূমিকা রাখবে বলেও আশা বিএনপি নেতাদের। সম্প্রতি অলি আহমেদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবসহ প্রতিনিধিদলের সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে এলডিপির সভাপতি।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য ‘বীর বিক্রম’ খেতাব প্রদান করা হয়। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে দল গঠনের পর তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে এসে রাজনীতিতে যোগ দেন।

২০০৬ সাল পর্যন্ত অলি আহমেদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি কিছুদিন কৃষি, খাদ্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী এবং পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্বও পান।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে চারদলীয় জোটের মনোনয়ন নিয়ে অলির সঙ্গে জামায়াতের তীব্র মতভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে অলির সঙ্গে বিএনপির বিরোধও তুঙ্গে চলে যায়। ওই সময় তিনি চট্টগ্রাম-১৩ ও ১৪ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হন। চট্টগ্রাম-১৩ আসনে জয়লাভ করলেও চট্টগ্রাম-১৪ আসনে জামায়াত প্রার্থীর কাছে হেরে যান।

দলীয় হাইকমাণ্ডের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে অর্থাৎ ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর অলি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন এলডিপি। যদিও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে বেশিদিন সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি অলির।

২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সরকার গঠনের পর থেকে অলি এই জোটে আছেন। তবে গত সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে।

অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের সঙ্গী ২০-দলকে মূল্যায়ন বা তাদের মতামত ছাড়াই ওই ফ্রন্ট গঠন করেছিল বিএনপি। ঐক্যফ্রন্টর নেতৃত্বে সংসদ নির্বাচনে যোগ দিয়ে ভরাডুবি হয় বিএনপির। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে মেনে নেয়নি অলি আহমেদ। এছাড়া তার দল ছেড়ে যাওয়া আব্দুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন এলডিপিকে জোটের শরিক দল হিসেবে বিএনপির স্বীকৃতির বিষয়েও ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয় তিনি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শরিকদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়া বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেওয়ার পরই আলাদা জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৭ জুন ২০-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), খেলাফত মজলিশ ও ন্যাশনাল মুভমেন্ট এই চারটি দল নিয়ে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন অলি আহমেদ। জামায়াতকেও এই মঞ্চে ভেড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

এরপর বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মাঝে আবারো অলি আহমেদকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। অতীতের সব সন্দেহ বা অবিশ্বাসকে পেছনে ফেলতে এবার অলি আহমেদকে আস্থার জায়গায় আনার কাজ শুরু করেছে বিএনপি। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার জন্য বিএনপি যে ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের মাধ্যমে ‘যুগপৎ আন্দোলন’র কথা ভাবছে সেখানে অলি আহমেদ জোরালো ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

যার প্রমাণ মিলেছে গত রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কর্নেল অলির মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসার বৈঠকের খবরে। রোববার রাতে সাড়ে ৩ ঘণ্টার ওই বৈঠকের নেতৃত্ব দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ভোরের আকাশকে বলেন, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার অংশ হিসেবেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে পুরোনো দিনের অনেক হিসাব-নিকাশ বা ভুল-বোঝাবুঝির অবসানও হয়েছে। রাগ-ক্ষোভ থাকলেও জিয়া পরিবারের প্রতি কর্নেল অলি তার কমিটমেন্টের কথা তুলে ধরেন বৈঠকে।

ওই বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা করেন অলি আমমেদ। তবে বিএনপি মহাসচিব এবার অলি আহমেদকে মূল্যায়ন বা তাকে গুরুত্ব দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া আগামী দিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অলির মতো সিনিয়রদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের বিষয়টি এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ভোরের আকাশের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও মিটিংয়ের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দাবি আদায়ে কাজ করছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে আমরা অনেকের সঙ্গে কথা বলছি। অলি আহমেদের সঙ্গে বিএনপির এখন সুস্পর্ক বলে দাবি করেন নজরুল ইসলাম খান। অলি আহমেদকে মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, এক জায়গায় আলোচনায় বসলে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। সম্মানিত লোককে বিএনপি সবসময় মূল্যায়ন করে।