logo
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:৩১
মেডিকেল বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
নিখিল মানখিন ও আরিফ সাওন

মেডিকেল বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রতিনিয়ত এসব বর্জ্য পানি, খাবার, মাটি, বাতাস ও পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ ও পরিবেশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

# হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নেই বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা # হাসপাতালের বর্জ্য সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্যের চেয়েও ক্ষতিকর # চলছে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই

রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে জনস্বাস্থ্যের জন্য মেডিকেল বর্জ্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোর বিপুল পরিমাণের চিকিৎসা বর্জ্য অস্বাস্থ্যকরভাবে ফেলে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে মিশছে গৃহস্থালি আবর্জনা। হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির ময়লা মিশে ক্লিনিক্যাল বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব বর্জ্য পানি, খাবার, মাটি, বাতাস ও পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ ও পরিবেশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় মেডিকেল বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা। করোনা মহামারি মোকাবিলায় যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়েছে তা মানব ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা লক্ষ করা গেছে।

রাজধানীর আবাসিক এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাবর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই অনুমোদন; পরিবেশ ছাড়পত্র। অনুমোদন নিয়েও পরবর্তীতে পূরণ করা হয় না অধিকাংশ শর্ত। মেডিকেল বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বড় মগবাজার মোড় থেকে কয়েক গজ দক্ষিণে এগোলেই বাম দিকে একটি ছোট্ট গলি, যা আদ্দ্বীন হাসপাতালের গলি নামেই বেশি পরিচিত। আগত রোগী ও তাদের অভিভাবকদের জুতা বাইরে রেখে ঢুকতে হয় ওই হাসপাতালে। এভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরিচয় দিলেও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পৃথক কোনো ব্যবস্থা নেই।

কর্তৃপক্ষ সাবধানে নিরাপদ জায়গায় ফেলার কথা জানালেও ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ কিংবা রক্তমাখা তুলা সবই একই ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে বলে হাসপাতালের কর্মচারীরা জানিয়েছেন। আলাদা করার ব্যবস্থা নেই গজ, ব্যান্ডেজ, ওষুধের শিশি, ব্যবহৃত স্যালাইন কিংবা রক্তের ব্যাগও। এসব বর্জ্য ফেলে দেওয়া হয় সিটি করপোরেশনের রাস্তার ধারে রাখা ডাস্টবিনে।

দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’। দৈনিক শত শত সব ধরনের রোগীর আগমন ঘটে এই হাসপাপাতালে। কিন্তু এই হাসপাতালেও নিজস্ব বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শহীদুল্লাহ হলের মূল গেটের বিপরীত পার্শ্বে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সাব ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব ধরনের বর্জ্য। ১০ মিনিট দাঁড়াতেই দেখা মিলল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্জ্য বহনকারী ঠেলা গাড়ির। গাড়িটির উপরিভাগ খোলা।

চালক মো. কামাল ভোরের আকাশকে বলেন, সব ধরনের বর্জ্য এই গাড়িতে করে সাব ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হয়। বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য আলাদা করে আনার কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান মো. কামাল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই নিজস্ব বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা। সিটি করপোরেশনের সাব ডাম্পিং স্টেশনে ফেলার আগে সব ধরনের বর্জ্য জমা রাখা হয় সি ব্লকের পেছনে খোলা জায়গায়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় রয়েছে ৮টি বড় সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। ওইসব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাস্তার অপর পাশে গড়ে উঠেছে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কলেজ গেট এলাকায় হুমায়ুন রোডের একটা গলিতে ৩টি ক্লিনিক, ৫টি ডায়াগনস্টিক ও ১টি হাসপাতাল রয়েছে। গলিতে ঢুকতে প্রথমে চোখে পড়ে নেবস ডেন্টাল ক্লিনিক, তারপর টেকনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তার সামনে ইউনিক মেডিকেল সেন্টার, সিপিএল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ভাইটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জেনিথ মেডিকেল সার্ভিস, নিউ মেডিকম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ ক্যাপিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে আবেদ্বীন হাসপাতাল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে মতে, এর সংখ্যা হবে ৩৫ থেকে ৪০টি। ওসব প্রতিষ্ঠান অনেকটা আবাসিক বাসাবাড়ি ও ফ্ল্যাটের সঙ্গে মিশে গেছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতো দূরের কথা, অভিযানের আতঙ্কে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডটাই খোলামেলা জায়গায় টাঙানো হয় না।

সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা গেছে, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৫০ গজের মধ্যে তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। সামনেই একটি ডাস্টবিন। মহল্লার গৃহস্থালির বর্জ্যরে সঙ্গে এখানে হাসপাতালের বর্জ্যও ফেলা হয়। ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ এখানে চোখে পড়ে। মিটফোর্ড হাসপাতালের চারতলায় শল্য চিকিৎসা বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, বর্জ্য ফেলার জন্য আলাদা পাত্র আছে।

কোথায় কী বর্জ্য ফেলতে হবে, ব্যবহৃত সুচ কীভাবে ফেলতে হবে তা জানানো হয়েছে বলে জানান নার্সরা। কিন্তু বর্জ্যরে পাত্রে দেখা গেল, সুচগুলোকে সিরিঞ্জ থেকে আলাদা করা হয়নি, পাত্রগুলোর মুখ খোলা।

কর্মরত নার্সরা জানান, তাড়াহুড়োয় নিয়মকানুন মানা সম্ভব হয় না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো পদ্ধতি মানা হয় না। বিভিন্ন পাত্রে ময়লা রাখা হয়। প্রিজমের সঙ্গে চুক্তির পর সুইপার থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত সবাইকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার মুখে যে ডাস্টবিন আছে, তাতেই রক্তমাখা গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ফেলতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।

এ বিষয়ে নার্স ও কর্মচারীরা জানান, হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকায় সব সময় মেডিকেল বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলা সম্ভব হয়ে উঠে না। তা ছাড়া অনেক রোগী ও তাদের লোকজন সব ধরনের বর্জ্য বালতিতে মিশিয়ে ফেলেন। এতে অনেক সময় হাত দিয়ে বর্জ্যগুলো আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানান নার্স ও কর্মচারীরা।

রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডে জেনারেল মেডিকেল হাসপাতাল। ৬০ শয্যার এই হাসপাতালের নিচতলায় রাখা আছে ইস্পাতের ঝুড়ি। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঝুড়ির বর্জ্য প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে সুইপাররা নিয়ে আশপাশের ডাস্টবিনে ফেলেন।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা লক্ষ করা গেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ভেতরে ক্যাম্পাস অনেকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মেডিকেল বর্জ্য ফেলার জন্য পাত্র রয়েছে। কিন্তু ওইসব বজ্যৃ ফেলা হয় ডিসিসির ডাস্টবিনে। জরুরি বিভাগের সামনে ড্রেনেজগুলোর মধ্যেও মেডিকেল বজ্যৃ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেডিকেল বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি রয়েছে।

যেসব বর্জ্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সেগুলো ডিসিসির সাধারণ ডাস্টবিনে ফেলা হয় বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাস্তার ধারে রাখা ডিসিসি’র ডাস্টবিনে ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্য ফেলতে দেখা গেছে। ওই হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী জানান, হাসপাতালের ভেতরে মেডিকেল বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট পাত্রে রাখা হয়। কিন্তু ওইসব বর্জ্য ফেলে দেয়া হয় রাস্তর ধারে রাখা ডিসিসি’র ডাস্টবিনে বলে জানান ওই কর্মচারী।

এভাবে রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিকেল বর্জ্য ফেলে দেয়া হয় রাস্তায় উন্মুক্ত সাধারণ ডাস্টবিনে, নালা, নর্দমা ও নদীতে।

চলছে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই

রাজধানীর অলিগলিতে গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকের মতো নামকরা হাসপাতালগুলোও চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া। পরিবেশ আইন অনুযায়ী যে কোনো ধরনের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এ আইন কেবল কাগজেই বন্দি। হাসপাতালগুলো মোটেই তোয়াক্কা করছে না আইনের।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেট্রো অফিসের এক তদন্ত কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, সম্প্রতি শতাধিক হাসপাতালকে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ তালিকায় রয়েছে শহরের অলিগলিতে গড়ে ওঠা ক্লিনিকও। পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও তারা সেটা নেয়নি। ঢাকার এমন কোনো হাসপাতাল-ক্লিনিক নেই যেটা পুরোপুরি আইন মেনে চলছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ক্লিনিক-হাসপাতালে নোটিশ পাঠায়। সত্যিকার অর্থে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মেনে চলে এমন কোনো হাসপাতাল নেই। কোনো না কোনো ত্রুটি থাকবেই। আমরা তাদের চাপে রাখছি যেন একসময় পুরোপুরি নিয়ম মেনে চলে। আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে সবাই নিয়ম মানবে বলে মনে করছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেট্রো অফিসের ওই কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, যে কোনো মেডিকেল বর্জ্যরে তুলনায় করোনা বর্জ্য একশ’ গুণ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই যত্রতত্র এসব বর্জ্য ফেলে রাখা বা সঠিক নিয়মে পরিশোধন না করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন, বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে বর্জ্য শোধনাগার ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুটি আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে, একটি আল্ট্রায়োলেটের প্রযুক্তি অন্যটি মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে সরকার দ্রুতই বর্জ্য শোধনাগার ক্রয়ের দিকে যাবে বলে জানান মো. ফরিদ উদ্দিন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে জানান, হাসপাতাল-বর্জ্য সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্যরে চেয়েও ক্ষতিকর। সিরিঞ্জ ও স্যালাইনের ব্যাগ হেপাটাইটিস বি ও সিসহ কিছু রোগের জীবাণু ছড়ায়। রক্ত, মূত্রসহ বিভিন্ন তরল বর্জ্য নর্দমায় ফেলে দিলেই তা দূষণমুক্ত হয়ে যায় না।

নর্দমার ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে টাইফয়েড ও আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগের জীবাণু বহুদিন বেঁচে থাকে। রক্ত, পুঁজ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইনের ব্যাগের মতো জীবাণুবাহী বর্জ্য পৃথক পাত্রে রাখা দরকার। আবার সুচ, সিরিঞ্জ জীবাণুবাহী বর্জ্য হলেও এতে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলোর জন্য পাত্র হবে আলাদা। আর জীবাণু বহন করে না এমন বর্জ্য রাখার জন্য পৃথক পাত্র থাকা দরকার।

মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোর বিপুল পরিমাণের চিকিৎসা বর্জ্য অস্বাস্থ্যকরভাবে ফেলে দেয়া হয়। এর সঙ্গে মিশছে গৃহস্থালি আবর্জনা। হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির ময়লা মিশে ক্লিনিক্যাল বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব বর্জ্য পানি, খাবার, মাটি, বাতাস, পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ ও পরিবেশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনা মহামারি মোকাবেলায় মেডিকেল বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা।

কোভিড-১৯ মেডিকেল বর্জ্য সম্পর্কে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়েছে তা মানব ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডব্লিউইচও এক প্রতিবেদনে বলেছে, হাজার হাজার টন বাড়তি চিকিৎসা বর্জ্য বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থাটি বলেছে, অতিরিক্ত বর্জ্য মানব ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির জরুরি প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।