৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর এমন জয় বাংলাদেশ দেখেনি কখনো। ক্রিকেট ইতিহাসেও অনেকটা বিরল এমন ঘটনা। সপ্তম উইকেটে ১৭৪ রানের রেকর্ড অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাংলাদেশকে জয় পাইয়ে দেন আফিফ ও মিরাজ। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। শুক্রবার চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে জয় দিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করতে মরিয়া টিম টাইগার্স।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। প্রথম ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে ডমিঙ্গো জানান, এমন জুটি হবে তিনি আগেই জানতেন। তার বিশ^াস ছিল ম্যাচ বের করে আনতে পারবেন আফিফ ও মিরাজ।
বৃহস্পতিবার ছিল বাংলাদেশের ঐচ্ছিক অনুশীলন। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ খেলার পর বিশ্রামেই ছিলেন আফিফ-মিরাজসহ সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। তবে অনুশীলন করেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির রাব্বিসহ স্কোয়াডের ৭ ক্রিকেটার।
অনুশীলনের ফাঁকে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলেন ডমিঙ্গো। প্রথম ম্যাচের জয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু মিরাজ যখন ব্যাট করতে যায় তখন আমি শ্রিকে (শ্রিনিবাস চন্দ্রশেখরন, বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্ট) বলছিলাম যে, ওরা দুজন ১৫০ রানের জুটি গড়বে। এরপর তাসকিন-শরিফুলের সামনে ১৫ রান থাকবে।’
মিরাজের ব্যাটিং সম্পর্কে নিজের আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মিরাজের ব্যাটিংয়ের ওপর অনেক আস্থা রয়েছে। তার টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। নিউজিল্যান্ড সফর এবং বিপিএলেও ভালো ব্যাট করেছে। এটা বিশ্বাস করা কঠিন, তবে তখনও আমার বিশ্বাস ছিল যে জিততে পারবো। কারণ উইকেট ভালো ছিল, রানরেটও আমাদের হাতে ছিল।’
মিরাজের সঙ্গে ৯৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আফিফ। ম্যাচ জেতার পর আফিফ যদিও বলেছিলেন, জয়ের কথা ভাবেননি তারা দুজন। তবে ড্রেসিংরুমে হেড কোচ ডমিঙ্গোর ভাবনা ছিল ভিন্ন। লক্ষ্যমাত্রা ৬০ রানে নেমে আশার পরই জয়ের ব্যাপারে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন তিনি। ডমিঙ্গো বলেন, ‘যখন দেখলাম আমাদের লক্ষ্য ৬০ রানের নিচে নেমে এসেছে, তখনই ভাবলাম আমাদের এখন ভালো সুযোগ আছে। কারণ মোমেন্টাম আমাদের সঙ্গে ছিল। একটা পর্যায়ে তাদের (আফগানিস্তান) বোলিং অপশনও কমে আসছিল। উইকেট সত্যিই ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল।’
বাংলাদেশের ইনিংসের মাঝ পথে ফ্লাডলাইট বিভ্রাট। খেলা বন্ধ ছিল ১৫ মিনিট। তখনও জয়ের জন্য ৮৬ রান দরকার। সেই মুহূর্তে খানিক চিন্তায় পড়েছিলেন ডমিঙ্গো। তবে আফিফ ও মিরাজ যেভাবে পরিপক্ক ব্যাটিং করেছে, তা সব চিন্তা দূর করেছে।
তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে ফ্লাডলাইটের কারণে আসা বিরতিটি আমাকে নার্ভাস করে তুলেছিল। কারণ সেই বিরতির আগে ২-৩ ওভার ভালো যাচ্ছিল আমাদের। আবার খেলা শুরু হওয়ার আফিফও খানিক ছন্দ হারায়। তবে এরপর দারুণ পরিপক্কতা দেখিয়ে সেই ধাপটা উতড়ে গেছে।’
কিছুদিন আগেও ডমিঙ্গোকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বেশ। বিশেষ করে টি টোয়েন্টি বিশ^কাপে ভরাডুবির পর তার বিদায়ে সোচ্চার ছিল অনেকে। কিন্তু তিনি টিকে গেছেন। ডমিঙ্গো অবশ্য অনেকটাই নির্ভার থাকেন। নেতিবাচক সংবাদে তিনি বিচলতি হন না।
তিনি বলেন, ‘এটা (তার থাকা, না থাকা) বিসিবির ব্যাপার। যদি আত্মবিশ্বাসী হতে হয় তাহলে তো আন্তর্জাতিক দলকে কোচিং করাতে পারব না। সংবাদমাধ্যম ও মানুষ যা বলে, আমি তাতে মেজাজ হারাতে পারি। কিন্তু এটা করা জরুরি নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের (সংবাদমাধ্যম) কাজ এটা, আপনারা আমাকে বা খেলোয়াড়দের নিয়ে যা খুশি লিখতে পারেন। আমি সেটা খেলোয়াড়দের থেকে দূরে রাখি। আপনাদের যা খুশি আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি মেজাজ হারাব না। কিন্তু সত্যি বলতে, আপনারা যা লেখেন তা বেশিরভাগ সময় আমি বুঝতেই পারি না।’
গুঞ্জন উঠেছে, ব্যাটিং পরামর্শক হয়ে জেমি সিডন্স আসায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে ডমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ হয়তো আরো অন্ধকারের দিকে। সঙ্গে খালেদ মাহমুদ সুজনের টিম ডিরেক্টর গিসেবে অন্তর্ভুক্তিতে ক্ষমতা জানিয়েছেন ডমিঙ্গো।
সিডন্স প্রসঙ্গে ডমিঙ্গোর জবাব, ‘জেমি কি যেন? ব্যাটিং কোচ। হ্যাঁ, সেটাই তার কাজ। দেখুন, সে অনেক অভিজ্ঞ এক কোচ। বিশ্বজুড়ে কোচিং করিয়েছে। এখানকার সিস্টেম সে জানে, অনেক খেলোয়াড়কে সে চেনে। হয়ত আমার চেয়েও ভালো জানে, কারণ আগেও সে এখানে ছিল। তাই তাকে পেয়ে ভালো লাগছে। কোচিং স্টাফে সে অনেক অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
সুজনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে টিম ডিরেক্টর আমার ও বোর্ড মেম্বারদের মধ্যে সম্পর্ক ধরে রাখে। দল নির্বাচন ও এসব নিয়ে কথা হয়। আমি তো আর বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলব না লাইনআপ বা টসের সিদ্ধান্ত নিয়ে। তাই তাকে পেয়ে ভালো হলো। তিনি আমাকে চাপমুক্ত করেছেন।’