গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
গত বুধবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে নবীনবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার পর বুধবার রাতেই তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলো পিয়াস সিকদার (২২), অন্তর (২১) ও জীবন (২০)।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অতিস কুমার মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগামী শনিবারের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী তার বন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকার হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে আসছিলেন। পথে একটি ইজিবাইক থেকে তাদের তুলে নেওয়া হয়। পরে সাত থেকে আটজন মিলে তাদের গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ’ করে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা সহপাঠীকে মারধর করে।
এ ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে গোপালগঞ্জ সদর থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া সড়কের যান চলাচল। এ সময় রাস্তায় আটকা পড়ে প্রায় কয়েক হাজার যানবাহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
দুপুর আড়াইটায় অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ঘোনাপাড়া ঘটনাস্থলে যান গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা। তারা অভিযুক্তদের আটকের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন।
দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এ কিউ এম মাহবুব ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের অবরোধ ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার আহ্বান জানালেও রাস্তা ছাড়েনি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এরপর বিকেল ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বহিরাগতরা। এ সময় তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হটিয়ে দেয়। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে স্থান ছাড়তে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। অবরোধের ১১ ঘণ্টা পর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ধর্ষকদের দ্রুত আটক করে তাদের পরিচয় প্রকাশের জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে জড়িতদের খুঁজে বের করা না হলে আমরা কঠিন আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে অবস্থান করে সেসব জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা বলয় তৈরিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছি। এছাড়া আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এ ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে। দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিজেই বাদী হয়ে এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রহমান (প্রশাসন) বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়েছে। রাতেই সুইপার কলোনি এলাকার অন্তর ও জীবন এবং সানকুড় এলাকার পিয়াল নামে এই তিন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও ঘৃণ্য। জড়িতদের দ্রুত আটকের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আমরা বারবার কথা বলে যাচ্ছি।’