প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনার নিয়োগে বাছাই করা ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা রাষ্টপ্রতির কাছে জমা দিয়েছে সার্চ কমিটি। এই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচ জনকে বাছাই করে দু-এক দিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সোয়া ৭টায় কমিটির পাঁচ সদস্য বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে এই তালিকা তুলে দেন।
আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি প্রতি পদের বিপরীতে দুই জনের নাম সুপারিশ করেছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে তালিকা জমা দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতিকে আমরা ১০ জনের নাম দিয়েছি। সেখান থেকে পাঁচজনের নির্বাচন কমিশন গঠন করে শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
রাত ৮টায় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে তিনি আরো বলেন, সার্চ কমিটির নাম প্রকাশ করা হবে না। দু-এক দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করবেন। রাষ্ট্রপতি নামগুলো দেখে পাঁচজনকে নির্ধারণ করবেন। শিগগির এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সার্চ কমিটি পাঁচ সদস্য বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। তবে অসুস্থ থাকায় কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বঙ্গভবনে যেতে পারেননি। বাকি সদস্যরা ইসি গঠনের চূড়ান্ত ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন।
সার্চ কমিটির সদস্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনের পাশাপাশি কমিটির সচিব হিসেবে দায়িত্বপালনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গভবনে।
কবে নাগাদ নতুন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হতে পারে- জানতে চাইলে প্রেস সচিব এর আগে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তিনি যখন মনে করবেন, তখন নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতির আদেশের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন করবে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালে কে এম নুরুল হুদা কমিশন নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। তখনকার সার্চ কমিটি যেদিন রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ তুলে দিয়েছিল, সেদিনই নিয়োগের আদেশ হয়েছিল।
এবার প্রথম আইনের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে ইসিতে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। এজন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সার্চ কমিটি গঠন করেন।
এবারের সার্চ কমিটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার তাদের সপ্তম বৈঠকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে। তবে ৩২২ জনের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হলেও চূড়ান্ত ১০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তার আগে ২০ জনের তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি।
সার্চ কমিটি জানায়, এটা প্রকাশের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তবে বাছাই করা চূড়ান্ত তালিকায় সার্চ কমিটির নিজেরা নতুন কোনো নাম যোগ করেনি বলে জানিয়েছিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান । যেহেতু কমিটির সদস্যরা নিজেরা নতুন কোনো নাম যোগ করেননি, সেহেতু প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম ৩২২ জনের তালিকার মধ্যে রয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে সার্চ কমিটি। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি পদের জন্য দুজন এবং নির্বাচন কমিশনারের শূন্য পদের প্রতিটির জন্য দুজনের নাম তারা প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তার তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর হতে হবে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় পদে অন্তত ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাইয়ের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। গত ২৭ জানুয়ারি ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন সংসদে পাস হয়। এরপর বিলে রাষ্টপ্রতি স্বাক্ষর দিলে তা আইনে পরিণত হয়। আইন অনুযায়ী এবারই প্রথম সার্চ কমিটি গঠনের মাধমে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার নিয়োগের জন্য যোগ্য ১০ জহনকে বাছাই করা হয়। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নতুন ইসি গঠন করেন।
৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠনের পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠকে বসে তারা। প্রথম বৈঠকের পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে নাম প্রস্তাবের আহ্বান করে সার্চ কমিটি। ২৪ রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান সার্চ কমিটির কাছে ৩২৯ জনের নাম প্রস্তাব করে। তবে বিএনপিসহ একাধিক দল সার্চ কমিটির কাছে কোনো নাম প্রস্তাব করেনি।
রাজনৈতিক দল ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নাম পর্যালোচনা করতে কমিটি কয়েক দফায় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে ওয়েবসাইটে ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। সেখান থেকে বাছাই করে প্রথমে ২০ জনের ও পরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে। চূড়ান্ত নামের তালিকা আজ বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয় সার্চ কমিটি।