# রুশ আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘের # ইউক্রেনে সামরিক আইন জারি
অবশেষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল ইউক্রেন-রাশিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার পরই ইউক্রেনে শুরু হয়ে যায় রুশ সেনা অভিযান। আগেই ইউক্রেন সীমান্ত বরাবর প্রায় ২ লাখ সৈন্য সমাবেশ করে মস্কো।
গতকাল সকালে সেই বিপুল সৈন্য এগিয়ে যায় ইউক্রেনের দিকে। এরপর রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। জল, স্থল ও আকাশ পথের পাশাপাশি চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানায়, রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধে সামরিক আইন জারি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি এই হামলাকে নাজি আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, রুশ বাহিনী সাতসকালে ‘খলনায়ক’-এর মতো হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেন এই হামলা প্রতিহত করবে এবং তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। দেশকে রক্ষার জন্য ইউক্রেনবাসীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবেন তাদের সবার হাতে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া হবে।’
রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের অন্তত ৪০ জন সৈন্য এবং ৩০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন বলে দেশটি স্বীকার করেছে। এর মধ্যে ওডেসা বন্দরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৮ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে ইউক্রেন সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা রুশ বাহিনীর প্রায় ৫০ ‘দখলদারকে’ গুলি করে হত্যা করেছে এবং ছয়টি রুশ বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যুদ্ধের প্রথম দিনেই হতাহতের সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স ও বিবিসি এ খবর দিয়েছে।
তবে রুশ সেনা হতাহতের খবর ও বিমানের ক্ষয়ক্ষতির ওই অভিযোগ নাকোচ করে দিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল ইউক্রেনের ৭৪ সামরিক ঘাঁটি ও স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেনে যেন রাশিয়া আগ্রাসন না চালায়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যখন সেই বিষয়ে বৈঠক করছিল, তখনই টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে ‘সেনা অভিযান’ পরিচালনার ঘোষণা দেন পুতিন। গতকাল সকালে টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া ওই ভাষণে পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানান। যেকোনো ধরনের রক্তপাতের জন্য ইউক্রেন দায়ী থাকবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
পুতিন আরো বলেন, ইউক্রেন আর রুশ বাহিনীর মধ্যে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী ও স্রেফ সময়ের ব্যাপার। তিনি মন্তব্য করেন ‘ন্যায়বিচার ও সত্য’ রাশিয়ার পক্ষে রয়েছে। তিনি সতর্ক করেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নিলে মস্কো তাৎক্ষণিক জবাব দেবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসে। গত তিন দিনের মধ্যে এটি নিরাপত্তা পরিষদের দ্বিতীয় জরুরি বৈঠক। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে।
বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ইউক্রেনে সেনা আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুরোধ করেন।
পশ্চিম ইউক্রেনের একটি বিমানবন্দরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সত্যতা বিবিসি যাচাই করতে পেরেছে। এর আগে মস্কো বলেছিল তারা সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং কয়েকটি বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কিয়েভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং দেশটির পশ্চিমে ইভানো-ফ্র্যাকিভস্ক বিমানবন্দর।
বিবিসি জানায়, পূর্ব ইউক্রেনেও তুমুল লড়াই হচ্ছে বলে খবর আসছে। দেশটির দ্বিতীয় বড় শহর খারকিভের বাসিন্দারা বলছেন দুই পক্ষের মধ্যে গোলাবিনিময় এবং অনবরত বিস্ফোরণে তাদের ভবনের জানলাগুলো কাঁপছে।
ইউক্রেনের সহকারী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তামন্ত্রী জেরাশচেঙ্কোর অভিযোগ, রাজধানী কিয়েভের সেনাসদরের পাশাপাশি বেসামরিক বিমানবন্দর এবং ঘনবসিতপূর্ণ এলাকাতেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। অন্য কিছু বিমানবন্দরেও একই কায়দায় হামলা চালানো হয়েছে।
গত সোমবার রাতে পুতিন ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। সেখান থেকেই প্রথম রুশ সেনার অনুপ্রবেশেরও খবর মেলে।
ওই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ রুশ। মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইউক্রেন বাহিনীর দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে ডনবাসে। ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র, কামান এবং ভারী মর্টার ব্যবহার করেছে দুই পক্ষই।
ডনবাস থেকে কিয়েভে অভিযান চালানোর পথে পুতিনের বাহিনী ‘ইউক্রেনের সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে পরিচিত খারকিভের দখল নেবে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত করে খারকিভের অদূরে বিমান থেকে হাজারের বেশি রুশ ছত্রীসেনা অবতরণ করে। খারকিভে মোতায়েন ইউক্রেন বাহিনীর সঙ্গে লড়াই হয় পুতিনের পাঠানো প্যারাট্রুপারদের।
এদিকে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রথম দিন রাজধানী কিভেই রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হানায় অন্তত ৩০০ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ! কার পাশে কোন দেশ?
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে মস্কো। ‘শীতল যুদ্ধের প্রায় ৪০ বছর পর ফের দুই ভাগে বিভক্ত বিশ্ব। একদিকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে রাশিয়াকে সমর্থন করছে চীন। এই পরিস্থিতিকে অনেকেই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’-এর আগের মুহূর্ত বলে ব্যাখ্যা করছেন। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের কোন দেশ কোন পক্ষকে সমর্থন করছে।
রাশিয়ার পাশে যারা
এক্ষেত্রে অনায়াসে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু কিউবার সমর্থন পাবে রাশিয়া। আগেই চীন জানিয়ে দিয়েছে এই লড়াইয়ে রাশিয়ার পাশে রয়েছে দেশটি।
এছাড়া একসময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকা আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কর্গিস্তান, তাজিকিস্তান এবং বেলারুসের সমর্থন পাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। আফগানিস্তানে তালেবান শাসন কায়েম হওয়ার পর সুরক্ষার স্বার্থে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো রাশিয়াকেই সমর্থন করবে। আজারবাইজান এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইরানকেও পাশে পাবে মস্কো। এছাড়া পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে উত্তর কোরিয়ারও সমর্থন পাবে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পাশে যারা
ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলোকে পাশে পাবে ইউক্রেন। বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যাান্ড, ইতালি, লাক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, ব্রিটেন এবং আমেরিকার সমর্থন পাবে ইউক্রেন। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াও ইউক্রেনকে সমর্থন করছে।