নতুন বছরে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকবে বিনিয়োগকারীদের এমন প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে উল্টো চিত্র দেখছেন তারা। শুরুতে কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সময় বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরো নাজুক হচ্ছে। মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করেও দেখতে হচ্ছে একই চিত্র। অবিরাম দরপতনে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, লাগামহীন পতনে তারা দিশাহারা। পুঁজি সুরক্ষায় চিন্তিত তারা।
বছরের শুরু থেকেই বড় বড় পতন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি ধারাবাহিক পতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল এক দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১০৯ পয়েন্ট। দিন শেষে সূচকের অবস্থান হয়েছে ছয় হাজার ৮৩৯ পয়েন্টে। কমে গেছে লেনদেনও। দিন শেষে লেনদেন দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫০ কোটি টাকায়। এদিন বাজার মূলধন কমে গেছে সাত হাজার কোটি টাকা। গতকাল বাজার মূলধন দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায়, আগের কার্যদিবসে যা ছিল পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে অব্যাহত পতন থাকায় নিজেদের পুঁজি সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে বর্তমানে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। সবাই পুঁজির নিরাপত্তার কথা ভেবে বাজার থেকে টাকা বের করে নিতে যাচ্ছেন, যার জের ধরে প্রতিনিয়ত কমছে শেয়ারদর। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিনিয়োগকারীরা অকারণেই ভয় পাচ্ছেন, কারণ তাদের মাথায় শেয়ারদর কমে যাওয়ার জুজু ঢুকছে। এটা আসলে তাদের মনোগত বিষয়। এখন পুঁজিবাজার যেখানে রয়েছে, সেখান থেকে আরো নাজুক হওয়ার শঙ্কা খুবই কম।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজার এখন যে অবস্থানে আছে সেখান থেকে কেন পতন হচ্ছে তা ভাবার বিষয়। তবে বিনিয়োগকারীদের আরো ধৈর্যশীল ও সচেতন হতে হবে। তারা যদি ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন তাহলে পতন আরো ভারী হবে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজারে এখন নিয়মের কোনো বালাই নেই। এখন বাজার হয়ে পড়েছে গুজব ও খবরনির্ভর।
কিছু চক্র ইচ্ছা করেই এমন করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চক্রগুলো কৌশলে গুজব ছড়িয়ে একটি একটি করে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়াচ্ছে। ফলে মৌলভিত্তির বিচার ছেড়ে সবাই ঝুঁকে পড়ছেন এসব শেয়ারের দিকে। খেলা শেষ হয়ে গেলে চক্ররা আবার বের হয়ে যাচ্ছে। এসবের প্রভাবে বাজার গতি ফিরে পাচ্ছে না।
এদিকে বাজারসংশ্লিষ্টদের কথা মানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে, এমন কথা আমরা বহু আগে থেকে শুনে আসছি। কিন্তু এর বাস্তবতা কোনোভাবেই দেখতে পাচ্ছি না। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজার কারেকশন বা শেয়ারের দর সংশোধন হবে, এটা স্বাভাবিক। সেজন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতও থাকেন। কিন্তু এর বদলে পুঁজিবাজারে এমন পতন নেমে আসবে, তারা ভাবতে পারেননি।
তাদের মতে, বাজার খেলোয়াড়রা আবারো সক্রিয় হয়েছেন। তারাই বাজার নিয়ে খেলছেন। আর এ কারণেই বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। বাজারের লাগাম টেনে ধরার জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কেউই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চেয়ে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণসহ নতুন-পুরোনো সব বিনিয়োগকারী। লাভের আশায় বিনিয়োগ করে বড় ধাক্কা খেয়েছেন তারা। এখন এ বাজার ছেড়ে বের হয়ে যাবেন, তারও কোনো উপায় নেই।