রাজধানীর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে কাজ করছে ঢাকার দুই সিটি করপোশেন। প্রতিষ্ঠান দুটির কাজের সফলতায় ঢাকার পার্ক এবং উন্মুক্ত স্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে নগরবাসীর।
ঢাকাবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা না থাকলেও যতটুকু আছে তা নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করে দুই সিটি করপোরেশন। বেশ কয়েকটি বেদখল পার্ক নির্মাণ ও উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
নগরীর অনেক পার্কের নির্মাণকাজ শেষ হলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কারওয়ান বাজার ছোট্ট একটি পার্কের কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। এ নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কাজ শেষ না
হওয়ায় এই পার্কটি এখনো ভবঘুরেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। ডিএনসিসির উন্মুক্ত স্থানগুলো আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মোট ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠ দখলমুক্ত করে ব্যবহারোপযোগী
করার কাজ শুরু করলেও জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য তৈরি এ পার্কটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এ পার্কের নির্মাণকাজ আজো শেষ করতে পারেনি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।
পার্কটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে সবুজায়ন করার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন করে নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থার কথা থাকলেও এটি পড়ে আছে ভাগাড় অবস্থায়। এতে এই পার্কের আওতায় থাকা শিশু-কিশোরের বিকাশ মানোন্নয়নে
ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। স্থানীয়রা বলছেন, গত ছয় মাস আগেই ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও বাকি ৫ শতাংশ আর শেষ করতে সময় গেল প্রায় ছয় মাস। তবে কাজ শেষ করতেই লেগে গেল তিন বছর। আর
কবে নাগাদ জনগণের জন্য খুলবে এমন- প্রশ্ন সাধারণ নাগরিকদের। ডিএনসিসির এ প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি পার্ক ও খেলার মাঠের কাজ শেষ করে সাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেও কারওয়ানবাজারের এ
পার্কটি যেন এ এলাকার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দাবি, পার্কটির কাজ দ্রুত শেষ করে খুলে দিলে তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির জায়গা মিলবে। সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কটির প্রবেশমুখেই রাখা আছে
নির্মাণসামগ্রী। ভেতরে পার্কের বিভিন্ন স্থানে রাখা আছে নানা ধরনের কাঠের তৈরি আসবাব, ব্যবহৃত ও ভাঙাখাট, ভ্যানগাড়ি, নির্মাণসামগ্রীসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র। পার্কের চারদিকে বসার স্থান, সিঁড়ি করা হলেও সেগুলো কাদা
আর ময়লায় জরাজীর্ণ। পার্কের মধ্যে ছোট মাঠটিতে গরুও চরাতে দেখা যায়। এছাড়া পার্কের দক্ষিণ পাশে একটি পাবলিক টয়লেটের কাজ চলছে। তার পাশেই রয়েছে অর্ধ উন্মুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত একটি সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র
(এসটিএস)। পার্কটির ভেতরে তৈরি করা আছে দুটি কাঠের ঘর। কয়েকজন ভবঘুরেকে পার্কের মধ্যে অবস্থান করতেও দেখা যায়। বসার স্থানগুলোও ভরে আছে ময়লা ও আবর্জনায়। পার্কের মধ্যে ল্যাম্পপোস্টগুলোও খালি। রাতে
এর মধ্যে বসে মাদকসেবীদের আসর। কাজ শেষ না হতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসার স্থান, সিঁড়ি, ল্যাম্পপোস্ট। পার্কটি অনেকদিন ধরে এভাবে পড়ে থাকায় এর মধ্যে কারওয়ানবাজারের কয়েকজন দোকানি তাদের দোকানের
জিনিসপত্র রাখেন। পানির পাইপ দিয়ে বিভিন্ন ধোয়ামোছার কাজও করা হয়, মাঠে লাগানো ঘাস খাওয়ানো হয় গরু বেঁধে। পার্কটির কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা মোক্তার হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এখানকার
কাজ শেষ হয়নি বলে অনেকে জিনিসপত্র রাখছে। তাদের আমি বাধা দিলেও শোনে না। আমায় বেতন দেবে বলছিল কিন্তু এখনো দেয়নি। তাই আমিও আছি আমার মতো। এ বিষয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, পার্কটি চালু হলে
আমরাও এসে একটু বসতে পারতাম, আশপাশে তো কোনো পার্ক নেই। একজনের দেখাদেখি অন্যরাও পার্কটিকে নষ্ট করছে। পার্কটি তৈরির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের সাইড কন্ট্রাক্টর মো. আব্বাস বলেন, এই
পার্ক, এসটিএস ও পার্কের পাশে ১৬টি দোকানের কাজের জন্য সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পার্কের কাজ অল্প কিছু বাকি আছে। আর দোকান ও এসটিএসের কাজ হবে কিনা এখনো নিশ্চিত না। প্রকল্পটির প্রজেক্ট
ইঞ্জিনিয়ার সামিউল ইসলাম বলেন, পার্কটির কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও প্রায় দেড় মাস আগে শুরু হওয়া পাবলিক টয়লেটের কাজ শেষ হতে আরো চার থেকে পাঁচ মাসের মতো লাগতে পারে। আমরা একসঙ্গে ডিএনসিসির ৫০টি
পাবলিক টয়লেটের কাজ করছি। ২৫টির মতো শেষ হয়েছে, এখন বাকিগুলো চলছে। এ পার্কের কাজটি শুরু করতে একটু সময় লেগেছে। অনেক আগে কাজের পরিকল্পনা হলেও জানুয়ারির ৪ তারিখ থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখানে কাজ করতে গিয়ে আমাদের নিয়মিত নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের কাজের রড, কাঠ, ইট চুরি হয়ে যায়। পার্কের মধ্যে ভবঘুরে, নেশাখোরদের আবাসস্থল। পুরো অনিরাপদ একটি স্থান।
ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, পার্কটির ৯৫ শতাংশ কাজ কয়েক মাস আগেই শেষ হয়েছে তবে এর দক্ষিণ পাশে একটি পাবলিক টয়লেট এবং
সেকেন্ডারি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের (এসটিএস) কাজ চলমান থাকায় পার্কটি চালু করা যাচ্ছে না। সব কাজ শেষ করে একবারে পার্কটি উদ্বোধন করা হবে।