logo
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:১৯
ইউক্রেন সংকট: উভয়পক্ষকে নমনীয় হতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউক্রেন সংকট: উভয়পক্ষকে নমনীয় হতে হবে

ফাইল ফটো

শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ শুরু হয়েই গেল। ‘ইউক্রেনে রাশিয়া যেন আগ্রাসন না চালায়’- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যখন এই বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসেছিল, ঠিক তখনই টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে ‘সেনা অভিযান’ পরিচালনার

ঘোষণা দেন পুতিন। পুতিনের এ ঘোষণার পর রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালায়। রুশ বাহিনীর তৎক্ষণাৎ হামলায় ইউক্রেনের অন্তত ৪০ জন সৈন্য এবং ৩০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়ার সংবাদ

গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে, ইউক্রেন সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ৫০ ‘দখলদারকে’ গুলি করে হত্যা করেছে এবং রুশ বাহিনীর ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। অর্থাৎ, মুহূর্তের ব্যবধানে যুদ্ধের প্রথম দিনেই

শতাধিক প্রাণহানি দেখল বিশ্ব। দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রাখা রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ¦ শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে শুরুর দিনেই শতাধিক প্রাণ কেড়ে নিল। অর্থাৎ, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া বিশ্ববাসীর জন্য এ

‘ইউক্রেন যুদ্ধ’ নতুন চিন্তার কারণ হয়ে উঠল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ খুব একটা বেশিদূর গড়াবে না। এ সংকট থেকে সামনে বড় আকারের যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ সংকটকে দীর্ঘদিনের জমে থাকা সমস্যা হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার এ

সংকটকে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সূত্রপাত হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ ইউক্রেন সংকটকে আফগানিস্তানের সাথেও মিলিয়ে ফেলছেন। অনেকেই আশংকা প্রকাশ করছেন, ইউক্রেনের অবস্থা শেষ অবধি

আফগানিস্তানের মতো হয় কি না। তবে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের অবস্থা হতে পারে সিরিয়া বা লিবিয়ার মতো।

বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যৎবাণী সত্যি হয়ে ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ যদি লিবিয়া বা সিরিয়ার রূপ পরিগ্রহ করে, তবে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। পুরো বিশ্ব লিবিয়া কিংবা সিরিয়ার যুদ্ধের বিভীষিকা দেখেছে।

যুদ্ধকালে এসব দেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নিত্যদিনের সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছিল। শিশু, নারী, বৃদ্ধ নির্বিচার গোলাবর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি কেউ-ই। বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কিংবা সুবিধাভোগী

কর্তা রাষ্ট্রগুলো সে সময় শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে! তাদের বিবৃতির ধরন এমন ছিল, যেন তাদের করার কিছু নেই! শুধু লিবিয়া, সিরিয়া বা আফগানিস্তান নয়, অতীতের প্রতিটি সংকট বা যুদ্ধে বৃহৎ বা ‘চালক’ রাষ্ট্রগুলোর কোনো

ক্ষতি হয় না। এমনকি ওইসব দেশ পরিচালনাকারী কর্তাব্যক্তিরাও অক্ষত থাকেন। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মারা পড়ে শুধু সাধারণ জনতা।

করোনা অতিমারির কঠিন সময় পার করছে বিশ্ব । আতঙ্ক কাটেনি এখনো। সদ্য শেষ হওয়া আফগান যুদ্ধ তথা আফগান সংকটও রয়ে গেছে আগের চেহারায়। বিশ্বব্যাপী আরো অনেক সমস্যা সামনে আসছে প্রতিনিয়ত। এমন

কঠিন পরিস্থিতিতে কোনো একটা দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়া বা সামরিক বাহিনীর নির্বিচার গোলাবারুদ বর্ষণ এবং এর ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির সংবাদ নিতান্তই অনাকাক্সিক্ষত।

ইউক্রেনে চলমান সংকটে বাংলাদেশের আপাতত চিন্তার কারণ নেই বলা হলেও সেখানে কার্যত আটকে পড়া পনেরো শতাধিক বাংলাদেশি যতক্ষণ না দেশে ফিরে আসছে, তাদের পরিবার-পরিজন তথা দেশবাসীর অস্থিরতা কাটবে

না। কাজেই, এ বিষয়ে দায়িত্বরতদেরকে উদ্যোমী কর্মতৎপরতা গ্রহণ করতে হবে।

এখনো যুদ্ধটা রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব হিসেবেই প্রকাশ্য। কিছু দেশ আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ছে আর কিছু সুবিধাভোগী দেশ নতুন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। এ যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে

নোবেলজয়ী রূশ নাগরিক দিমিত্রি মুরাতভ মন্তব্য করেছেন।

এসব সংকট ও যুদ্ধের সংবাদ প্রত্যাশিত নয় কোনোভাবেই। করোনাকালের মহা সংকটের সময় বিশ^বাসী আশার সংবাদ শুনতে চায়, সংকটের নয়। সর্বোপরি, মানুষ শান্তি চায়, যুদ্ধ নয়।