মাতৃত্বের স্বাদ অসাধারণ এবং স্বর্গীয় এক অনুভূতি। কিন্তু অনেক ‘হবু মা’ এই স্বর্গীয় স্বাদ উপভোগ করতে গিয়েও ভোগেন দুশ্চিন্তায়। তাদেও সেই দুশ্চিন্তা স্ট্রেচমার্ক বা মাতৃত্বকালীন দাগ নিয়ে। গর্ভকালীন সময়ে হরমোনের পরিবর্তন এবং হঠাৎ ওজন বৃদ্ধির কারণে ত্বক যখন স্বাভাবিক ইলাস্টিসিটির চেয়ে বেশি প্রসারিত হয়, তখন ত্বকের নিচের কোলাজেন এবং ইলাস্টিন ফাইবারগুলো ছিঁড়ে যায়। এই ক্ষতচিহ্নগুলোই স্ট্রেচমার্ক বা স্ট্রায়া, সাদা গোলাপি রেখারূপে ত্বকের ওপর দেখা যায়।
যেসব স্থানে স্ট্রেচমার্ক দেখা দেয় :
তলপেট, হাতের বাহু, নারীর ব্রেস্টে, কোমরের নিচের অংশে, থাইয়ে।
যেসব কারণে স্ট্রেচমার্ক দেখা দেয় :
১.গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধি ২. হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, ৩. বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক পরিবর্তনের সময়, ৪. স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন ও ব্যবহারে, ৫. কুশিং সিন্ড্রোম এবং মারফেন সিন্ড্রোম রোগে।
প্রতিরোধে করণীয় :
Prevention is batter than cure - স্ট্রেচমার্ক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই সূত্রটি হুবহু মিলে যায়। শুরুর দিকে ব্যবস্থা বা চিকিৎসা নিলে শতভাগ না হলেও অনেকাংশে স্ট্রেচমার্ক বা স্ট্রায়া প্রতিরোধ করা যায়। স্ট্রেচমার্ক শুরুর প্রথম ধাপে চামড়া পাতলা হয়ে যায়। হালকা লাল/গোলাপি আভা দেখা দেয় এবং চামড়া কুঁচকে যায়।
ধীরে ধীরে এটা গাঢ় হয় এবং বাদামি ও কালচে রঙের সাদা ডোরা কাটা দাগের সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক ত্বকের লেয়ার থেকে উঁচু হয়ে ওঠে। কখনো বা গর্ত হয়ে বসে যায়। এ ধরনের স্ট্রেচমার্কের চিকিৎসা তখন অনেকটাই কঠিন, ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ।
তাই প্রেগন্যান্সির সেকেন্ড স্টাইমেস্টারে (৩-৬) সচেতন হতে হবে স্ট্রায়া গ্রেভিডার্মের ব্যাপারে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে ক্রিম/জেল বেজড ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরপরই সেটা ‘সিল’ করে দিতে হবে পেট্রোলিয়াম জেলি বা বায়োওয়েল দিয়ে। কোকো বাটার বা স্ট্রেচমার্ক ক্রিমও ব্যবহার করা যেতে পারে।
দুবার এ নিয়ম অনুসরণ করলে অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব ট্রায়া গ্রেভিডার্ম। যদিও পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না।
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি :
* ট্রপিক্যাল মেডিসিন- রেটিন এ/ট্রেটিনোইন যুক্ত ক্রিম। এটি কোলাজেন পুনরুদ্ধার করে। অথবা হায়ালুরনিক অ্যাসিড যুক্ত ক্রিম ত্বককে মসৃণ করে।
* মাইক্রো ডার্মাক্রেশন এবং মাইক্রেনিডলিং।
* পিআরপি- খুব ভালো কাজ করে দাগ কমাতে। যদিও কিছুটা কষ্টকর পদ্ধতি এবং দীর্ঘসময় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। ৫-৬টা সেশন লাগে।
* Co2 ফ্রেকশলাল লেজার- ব্যয়বহুল কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। স্কিন রিসার্ফেসিং এবং কোলাজেন রিমডেলিং করে নতুন একটা দাগমুক্ত ত্বকের সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের সিন্থসিস বাড়ায়। সাধারণত পিআরপি এবং লেজারের কম্বিনেশন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ৮-১০টি সেশনে স্ট্রেচমার্ক বা স্ট্রায়ার চিকিৎসা করা হয়।
লেখক: বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
এস্থেটিক ডার্মাটোলজিস্ট,
ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ঢাকা