logo
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:৫৭
নিরাপদ আশ্রয়ে স্নান কক্ষে ইউক্রেনের নাগরিকরা

নিরাপদ আশ্রয়ে স্নান কক্ষে ইউক্রেনের নাগরিকরা

রাশিয়ার আক্রমণ থেকে প্রাণে বাঁচতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বসবাসরত নাগরিকরা ঘরের স্নান কক্ষে আশ্রয় নিয়েছে।

ওলগা কিয়েভের বাম তীরের অংশে বাস করেন। এই শহরটি কিয়েভ শহরের ডিনিপারের পূর্বে অবস্থিত।

তার ছোট ছেলে ভাদিম কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনা করে। ভাদিম আক্রমণ থেকে বাঁচতে আজকাল বাথরুমে ঘুমাচ্ছে। তার কাছে মনে হচ্ছে স্নানকক্ষ হচ্ছে তাদের অ্যাপার্টমেন্টের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।

‘আমি তার পাশে বসে থাকি। সে যখন ঘুমে খারাপ কিছু দেখে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করি।’ বলেন ওলগা।

‘আমরা আশ্রয়স্থলে যাচ্ছি না। কারণ ওই জায়গাগুলো ১০০ শতাংশ নিরাপদ নয়। ওই আশ্রয়স্থলগুলো শিশুদের মনস্তত্ত্বকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বাড়িতে, সে (ভাদিম) ভালো করে ঘুমাতে পারে, কইতে পারে। তার কাছে এসব মনে হয় খুবই মজার’ বলছেন ওলগা।

ওলগা শনিবার বেলা ১টা থেকে ৪টার মধ্যে অনেকগুলো বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এবং এই শব্দগুলো ভবনের উত্তর পাশ থেকে আসছে বলে মনে হচ্ছিল।

‘অবশেষে পরিবেশ এখন একটু শান্ত আছে। শনিবার সকালে আমরা একটু ঘুমোতে পেরিছি।’ বলেন ওলগা।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন যে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দুই-এক দিনের মধ্যে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।

গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল যে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের এক থেকে চার দিনের মধ্যে দেশটির রাজধানী দখল হয়ে যেতে পারে।

পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেছেন যে, রাশিয়ার পরিকল্পনা হলো কিয়েভের সরকারকে পতন করা এবং একটি রাশিয়াবান্ধব সরকার গঠন করা।

তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখনো নিশ্চিত নন যে, পুতিন ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করে রাখতে চাইবে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো দখলদারকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার কিয়েভের উত্তরে ওবোলোন জেলায় রাশিয়ান সৈন্যদের কিয়েভে প্রবেশের সময় মোলোটভ ককটেল তৈরি করে দখলদারকে প্রতিহত করতে বলেছে।

স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন পুতিন। তার এ নির্দেশের পরই ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী।

আজ তৃতীয় দিনের মতো ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।

পূর্ব ইউক্রেনে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি অঞ্চল দোনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ওই অঞ্চলে শান্তিরক্ষার নামে সেনা পাঠানোয় একের পর এক পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে রাশিয়া।

মঙ্গলবার রাতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন।

এর কিছুক্ষণ আগেই যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

ইউক্রেন সীমান্ত ঘিরে রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে পশ্চিমাদের আগ্রাসনের অভিযোগের উত্তেজনার মধ্যেই গত সোমবার দোনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এরপর সেখানে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তিনি।

এরপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে পশ্চিমা বিশ্ব। প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। এরপর ঘোষণা আসে যুক্তরাষ্ট্রের।

সূত্র: সিএনএন