logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:২৩
করোনার টিকা প্রদানে সফল বাংলাদেশ
# এক দিনে টিকা প্রয়োগ বিশ্ব রেকর্ড # লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মানুষ টিকার আওতায় # দশম স্থানে বাংলাদেশ
নিখিল মানখিন ও আরিফ সাওন

করোনার টিকা প্রদানে সফল বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি

করোনা টিকা প্রদান কর্মসূচির সফলতায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। এক দিনে এক কোটি বিশ লাখ টিকা প্রদান করে বাংলাদেশ গড়েছে বিশ্ব রেকর্ড। ইতোমধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার আলোকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।

একটি দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৩ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদান করেছে বাংলাদেশ। টিকাদানে বিশ্বে দশম স্থানে রয়েছে দেশটি। রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশও বাংলাদেশের থেকে টিকা প্রদানে পিছিয়ে রয়েছে।

করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সূচকে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, টিকাদান কর্মসূচি এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব এবং দেশের মানুষের জোরালো অংশগ্রহণ সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সীমিত সম্পদ ও আয়তনের বিপরীতে বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের এই সাফল্যে ইতোমধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্ববাসী। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যার (ক্রমানুসারে) বিবেচনায় বাংলাদেশের সামনে রয়েছে অনেক উন্নত দেশ। করোনা মহামারিতেও জীবন ও জীবিকা সচল রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়েছে।

জানুয়ারি মাসজুড়ে অবনতি হওয়া দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। করোনায় দৈনিক নতুন রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার এবং মৃতের সংখ্যা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশের সফল করোনা টিকা কর্মসূচি।

টিকা সংগ্রহে নানা জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ

করোনা টিকা সংগ্রহে নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের খবর জানায় দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে প্রথম টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। সারা দেশে এই কার্যক্রম শুরু হয় ৮ ফেব্রুয়ারি।

শুরুতেই বাংলাদেশের করোনাভাইরাস টিকা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়ে। করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হওয়ার পর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর ফার্মাসিউটিক্যালের মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ। এরপর যখন বাংলাদেশের খুব বেশি টিকার প্রয়োজন তখন আর সেরাম আর কোনো টিকা পাঠায়নি। কথা ছিল প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে তারা। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় প্রতিশ্রুতির টিকা পায়নি বাংলাদেশ।

তবে টিকা সংগ্রহে থেমে থাকেনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টা। ভারতের আশা ছেড়ে দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশের সঙ্গে জোরালো যোগাযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। একের পর এক টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে দেশে টিকা আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া অনেক বন্ধু প্রতিম দেশের কাছ থেকে উপহার হিসেবে টিকা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি ডিঙিয়ে দেশের মানুষের করোনা টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। তবে পরে ভারতও আরো কিছু টিকা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের খবর জানায় দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে প্রথম টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। সারাদেশে এই কার্যক্রম শুরু হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। এর আগে বিশ্বে প্রথম ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল পরীক্ষামূলক মার্কিন নারী জেনিফার হ্যালার শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়।

বাংলাদেশে প্রথম গণটিকাদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় ২০২১ সালের ৭ আগস্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই কর্মসূচির আওতায় ৬ দিনে দেশে প্রথম ডোজ টিকা নেন ৫০ লাখ ৭১ হাজার জন। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর এ টিকাদান কর্মসূচির দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়ে চলে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু ঢাকায়। ঢাকার বাইরে চলে আরো ৩ দিন ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষ গণটিকাদান কর্মসূচি ঘোষণা করে। সেদিন দেশে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯২২ ডোজ টিকার প্রয়োগ হয়। দেশে প্রথম বুস্টার প্রয়োগ শুরু হয় ১৯ ডিসেম্বর। এর আগে ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশে^ প্রথম বুস্টার ডোজ নেন ব্রিটেনের সেই নারী মার্গারেট কিনান।

এক দিনে টিকাদানে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ

২০২২ মালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এক দিনে এক কোটি টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা করে সরকার। কিন্তু এক দিনে সেই লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া চার হাজার চিকিৎসকের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে তিনি এসব তথ্য জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২৬ ফেব্রুয়ারি এক কোটি ২০ লাখ টিকা দিয়েছি। আমি জানি না পৃথিবীর আর কোনো দেশে এক দিনে এক কোটি ২০ লক্ষ টিকা দিতে পেরেছে। এটি একটি বিরাট কাজ, এটি একটি মহৎ কাজ যে আমরা এক কোটি ২০ লক্ষ টিকা দিয়েছি। নতুন করে এক কোটি ১১ লক্ষ মানুষকে প্রথম ডোজ দিতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে একটি দেশের ৭০ শতাংশ লোককে টিকার আওতায় আনার প্রয়োজন। কালকে টিকা দেওয়ার পর থেকে আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার আমার ৭৩ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি।

মন্ত্রী বলেন, টার্গেটেড পপুলেশন যদি ধরি তাহলে বলতে পারেন শতভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। কিছু হয়তো বাকি থাকতে পারে। সেজন্য আমাদের এই টিকা কর্মসূচি আরো দুই দিন চলমান থাকবে। দুই দিন পরও প্রথম ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান থাকবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সফলভাবে ভূমিকা রাখছে। টিকাদান কর্মসূচি শুরুতে একটু সমস্যা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সংকট কাটিয়ে উঠে চমৎকারভাবে টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের টিকা দেওয়ার লক্ষমাত্রা অর্জন করেছি।