logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১০:৪৩
সাত বছরেও চালু হয়নি হৃদরোগ বিভাগ
শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী

সাত বছরেও চালু হয়নি হৃদরোগ বিভাগ

২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল

জেলার ২২ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যার নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল। আর এই হাসপাতালটিতে ২০১৫ সালে স্থাপন করা হয় কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) বিভাগ। সেই সময় হৃদরোগের চিকিৎসায় সংযোজন করা হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি।

তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে এই বিভাগের কার্যক্রম আজো শুরু হয়নি। ফলে জেলার কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ৬৫ কিলোমিটার দূরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। এতে পথেই প্রাণ হারান অনেক রোগী।

শুধু কার্ডিওলজি বিভাগ নয়, হাসপাতালের সব বিভাগেই রয়েছে চিকিৎসক সংকট। ফলে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নীলফামারীবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নীলফামারী সফরে আসেন। এখানকার মানুষের দাবির মুখে উন্নত চিকিৎসার জন্য নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে হৃদরোগের দুটি ওয়ার্ড স্থাপনের নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে ১০ শয্যার ওয়ার্ডের জন্য দুটো ডি-ফেসিলেটর মেশিন এবং ২০টি কার্ডিয়াক মনিটর স্থাপন করা হয়। যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। বছরের পর বছর বিভাগটি তালাবদ্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিও বিকল হতে বসেছে।

খালি রয়েছে যেসব পদ


হাসপাতাল সূত্র জানায়, জনবল কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ আছে ৫৭টি। এর মধ্যে ৪১ চিকিৎসকের পদই শূন্য। মাত্র ১৬ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি, গাইনি, শিশু, কার্ডিওলজি, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রতিটিতে একজন করে মোট সাতজন সিনিয়র কলসালট্যান্ট।

এসব বিভাগসহ ইএনটি, রেডিওলজি, চর্ম ও যৌন, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও মেডিসিন বিভাগে আরো ১১ জন জুনিয়র কলসালট্যান্টের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫০ পদের মধ্যে ৩২টিই শূন্য।

কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক, চর্ম ও যৌন রোগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। পাশাপাশি কার্ডিওলজি বিভাগটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এ ছাড়া হাসপাতালজুড়ে নেই উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিরাপত্তার জন্য নেই সিসিটিভিও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, সি-আরম, ডেন্টাল ইউনিট, মাইক্রোসকোপ, অটোএনালাইজার, ডায়াথার্মি ও অটোক্লেব মেশিনসহ ৩৯টির মধ্যে ১৮টি যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে আছে।

‘জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব যন্ত্রপাতি। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষ। ফলে বেসরকারি হাসপাতালে এসব পরীক্ষা করাতে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয় রোগীদের।’

অপরদিকে, হাসপাতালের তিনতলা নতুন ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ ও কেবিন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পুরো হাসপাতালে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আনসার নিয়োগসহ আউট সোর্সিং কর্মচারীদের মেয়াদ বৃদ্ধিও জরুরি।

সেবাপ্রার্থীদের বক্তব্য

জেলা শহরের নিউবাবুপাড়া এলাকার লালবাবু জানান, তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, ‘এখানে এই রোগের চিকিৎসক নেই। আপনারা রংপুরে নিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘নামেই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল; চিকিৎসা নেই। এত বড় হাসপাতাল অথচ চিকিৎসক নেই।’

একই এলাকার ফেরদৌসী বেগম জানান, মুখে ঘা ও অ্যালার্জির সমস্যার কারণে সপ্তাহখানেক আগে তার মেয়ে নিয়ে হাসপাতালে যান। বহির্বিভাগের টিকিট নিয়ে এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসকের দেখা পাননি।

তত্ত্বাবধায়ক বললেন, ‘চিঠি পাঠিয়েছি’


হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু-আল-হাজ্জাজ বলেন, ‘আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি। জয়েন করার পর যেটা শুনতে পেলাম এই হাসপাতালে একটি কার্ডিয়াক ইউনিট আছে। কিন্তু ইউনিটটি দীর্ঘদিন থেকে চালু হয়নি।

‘ইউনিটটি চালু করতে গেলে এখানে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ লাগবে। অন্যান্য যে সার্পোটিং ম্যান পাওয়ার প্রয়োজন, সেগুলোও লাগবে। এই ইউনিটটি চালু করার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই এটা চালু হবে। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে’, বলেন ডা. আবু-আল-হাজ্জাজ।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পুরো কার্যক্রম শুরু হয়।