logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:৩৩
ওসমানী উদ্যান: ১০ মাসের কাজে ৫ বছর পার
নাজমুল হাসান রাজ

ওসমানী উদ্যান: ১০ মাসের কাজে ৫ বছর পার

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ওসমানী উদ্যান। ছবি- ভোরের আকাশ

ঢাকাকে নতুন করে সাজানোর কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে নগরের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজের সময় ব্যাহত হওয়ায় ব্যর্থতার দায় কাঁধে না নিয়ে পারছে না সিটি করপোরেশন।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ওসমানি উদ্যানে সংস্কারের কাজ হাতে নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে কাজের সমাপ্তির বিষয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন- মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে কাজ করা ডিএসসিসির ওসমানী উদ্যানের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এবং কত দিনে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কেউই।

সরেজমিনে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ ওসমানি উদ্যানের সংস্কারকাজ মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘ ৫ বছরে উদ্যানটির ৭০ শতাংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এই অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়াতে সংস্থা দুটির সুনাম আর সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ করছে এমন ধারণা জনমনে।

সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১৭ সালে জলসবুজের ঢাকা প্রকল্পের আওতায় ২৯ একরের ওসমানী উদ্যানটিকে সংস্কার করার উদ্যোগ হাতে নেয়। উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের মধ্যে ছিল ওয়াকওয়ে, লেক উন্নয়ন, বাউন্ডারি ওয়াল, ল্যান্ডস্কেপিং ওয়ার্ক ফুডকোর্ট, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, খেলাধুলার অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত কাজ শেষ করার প্রাথমিক সময়সীমা থাকলেও দুবার সময়সীমা বাড়িয়ে যথাক্রমে ২০২০ সালের জুন ও ২০২১ সালের জুন মাস নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ তা আবার ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সংস্কার ব্যয় হিসেবে প্রথমে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও পরে তা বাড়িয়ে ৮৬ কোটি টাকা করা হয়।

নতুন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়িয়ে পানি নিষ্কাশন, পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন যোগ করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১০০ কোটি টাকার ওপর। পার্কটির সংস্কারের কাজ করছে ‘দি বিল্ডার্স লিমিটেড’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ওসমানী উদ্যানে একসময় হাঁটতেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আকরাম মাহমুদ বলেন, আগে এখানে সকাল-বিকাল হাঁটতাম, তবে কিছুদিন আগে একটু-আধটু হাঁটতে পারতাম। কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে একেবারে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। এখন রমনা পার্কে হাঁটি।’

তিনি আরো বলেন, দক্ষিণের মেয়র খুব ভালো কাজ করছে। তবে আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের কথা চিন্তা করে এই উদ্যানটি খুলে দিলে ভালো হয়।’

গুলিস্তান এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই বন্ধু-বান্ধব মিলে এই উদ্যানে খেলাধুলা করতাম, আড্ডা দিতাম, কিন্তু সংস্কারের কথা বলে উদ্যানটিতে আজ ৫ বছর ধরে এখানে ঢুকতেও পারছি না আমরা।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি আমাদের নিজেদের বাড়ির উঠানের মতো। তবে আমরা অনেক দিন যাবৎ এর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’ সাইদুল ইসলাম মতিঝিলের বাসিন্দা হলেও এই স্থানটি ব্যবহার করে আসছেন ছাত্রজীবন থেকে। তিনি বলেন, আগে তো পরিবেশ খারাপ থাকলেও অন্তত ঢুকে একটু গাছের নিচে বসতে পারতাম, কিন্তু এখন গরমে একটু আশ্রয়ও নিতে পারছি না।’

ওসমানী উদ্যান সংস্কার নিয়ে কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ জানি না কবে নাগাদ পার্কটির কাজ শেষ হবে। দীর্ঘদিন সংস্কার কাজে পার্কটি বন্ধ থাকায় আশপাশের বাসিন্দারা যারা সকাল-বিকালে পার্কটিতে হাঁটাহাঁটি করতেন তারা এখন বাধ্য হয়ে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে যাচ্ছেন।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা-১ মেরীনা নাজনীন বলেন, ‘আগের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে তারা ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে কিন্তু আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব সত্যিকারে কত শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সব মিলিয়ে এখনো ৬০-৭০ শতাংশের কাজ শেষ হয়নি। কোনোভাবেই আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে পার্ক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব না। এ কাজের সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘কাজের নিম্নমান ও দেরির কারণে ইতোমধ্যে আগের প্রতিষ্ঠানের সাথে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিল করেছে। নতুন করে টেন্ডারের বিল উত্থাপন করা হয়েছে।