রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মো. মোশারফের নেতৃত্বাধীন ‘গাংচিল বাহিনী’ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের জমি দখল, বাসস্ট্যান্ড, নৌপথ, মার্কেট ও হাউজিং প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করত। এসব কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় তারা বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও হামলা করেছে।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোশারফ বাহিনীর সদস্যরা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাত। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের প্রধানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের প্রধান মো. মোশারফ ওরফে লম্বু মোশারফ ওরফে গলাকাটা মোশারফ ওরফে গাংচিল মোশারফ (৪৫), সদস্য মো. বিল্লাল ওরফে মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে চোরা বিল্লাল (৩০), মো. মোহন ওরফে মোহন ওরফে বাইক মোহন (৩১), সাহাবুদ্দিন সাবু ওরফে সাবু ওরফে জলদস্যু সাবু (৪৪), মো. রুবেল ওরফে ডাকাত রুবেল ওরফে ট্রলার রুবেল (৩৩) এবং মো. সুমন মিয়া ওরফে সুমন হোসেন (৩০)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, তিনটি বড় ছোরা, দুটি চাপাতি, দুটি চাকু, একটি চাইনিজ কুড়ালসহ নগদ অর্থ জব্দ করা হয়।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গাংচিল বাহিনী রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে এক অজানা ভয় ও আতঙ্কের নাম ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের এ অপরাধ কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে তারা বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও হামলা করে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসবসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছে।
তিনি বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তার পাশের বিভিন্ন এলাকায় নৌপথ, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড ও হাউজিং প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড করে আসছে দুর্বৃত্তরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি র্যাব-২ মোহাম্মদপুর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী কবির হোসেনসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে।
কবিরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালে গাংচিল গ্রুপের প্রধান আনারের মৃত্যুর পর গ্রুপটি কয়েকটি ভাগ হয়। তৎকালীন এই গ্যাংয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড শীর্ষ সন্ত্রাসী লম্বু মোশারফের নেতৃত্বে মূল একটি অংশ পরিচালিত হয়, যারা মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার ও আশপাশের এলাকায় নৌপথ, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, হাউজিং প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, মাদক কারবার, খুন, ধর্ষণসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, র্যাব-২ লম্বু মোশারফ ও তার সহযোগীদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। রোববার রাতে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, লম্বু মোশারফের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্য ২৫-৩০ জন। তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে জমি দখল, হাউজিংয়ে চাঁদাবাজি, নৌপথে চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করত। এছাড়া ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক কারবারসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল তারা।