logo
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:৩০
লিটনের ৫০ এ ৮৬
ক্রীড়া প্রতিবেদক

লিটনের ৫০ এ ৮৬

আর সবাই যখন অনেকটাই ছন্দহীন। তিনি তখনো নিজের মতো। অটল, অবিচল। বোলারের চোখে চোখ রেখে রান সচল রাখলেন রানের চাকা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম ম্যাচ। উপলক্ষটা তিনি রাঙাতে পারতেন শতক দিয়ে। কিন্তু হলো না। আক্ষেপ থাকল ১৬ রানের। আফগানদের বিরুদ্ধে নিজের ৫০তম ম্যাচে লিটনের রান থাকল ৮৬।

তারপরও লিটনের ইনিংসে থাকল মাহাত্ম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পূর্ণ করলেন চার হাজার রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে পেলেন চতুর্থ ফিফটি। অথচ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে লিটনের শতক পাঁচটি। টানা দুটি ম্যাচে দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলে নিজের জাত চেনালেন বাংলাদেশের এই ওপেনার।

দ্বিতীয় ম্যাচে পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। শেষ পর্যন্ত তার ব্যাটে এসেছিল ১৩৬ রানের ঝলমলে ইনিংস। শেষ ম্যাচেও আফগানদের বিরুদ্ধে শুরু থেকে বেশ আত্মবিশ^াসী ছিলেন লিটন। যদিও তামিমের সঙ্গে ওপেনিং জুটি জমেনি তার।

ফজল হকের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তামিম বরাবরের মতো। টানা তিন ওয়ানডেতে আফগান পেসারের বলে আউট বাংলাদেশ কাপ্তান। ২৫ বলে তিনি করতে পারেন মাত্র ১১ রান। তবে অপর প্রান্তে লিটন ছিলেন স্বমহিমায়। এগিয়ে যেতে থাকেন সাবলিল ঢঙে।

তামিমের বিদায়ের পর সাকিবের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়েন তিনি। এরইমধ্যে তিনি দেখা পান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি। ফিফটি করতে লিটন বল খরচ করেন ৬৩টি। যার মধ্যে ছিল পাঁচটি চারের মার। দলীয় ১০৪ রানে ভাঙে দ্বিতীয় জুটি। বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ৩৬ বলে তিন চারে ৩০ রান করে তারকা এই অলরাউন্ডার।

সাকিবের বিদায়ের পর দ্রুত আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১২১ রানে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। রশিদ খানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ১৫ বল খেলে তিনি করেন ৭ রান। বাউন্ডারি নেই একটিও। দলীয় স্কোরে তিন রান যোগ হতেই হতাশ করেন তরুণ ইয়াসির আলী। তিনিও রশিদ খানের শিকার। ৪ বলে তিনি করেন এক রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম রানের খাতা খুললেন তিনি। প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয় তার। আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। তৃতীয় ম্যাচে কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু পারলেন না তিনি।

মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে লিটনের জুটি জমতে শুরু করলেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরির আভাস দিয়েও হতাশ করেন লিটন। দলীয় ১৫৩ রানে বিদায় নেন লিটন। মোহাম্মদ নবীর বলে তিনি ক্যাচ দেন গুলবাদিন নাইবের হাতে। যাওয়ার আগে করে যান ১১৩ বলে সাত চারে সর্বোচ্চ ৮৬ রান। লিটনের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারেনি আফগান বোলারদের বিরুদ্ধে। ৫৩ বলে কোন বাউন্ডারি ছাড়া ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। মোস্তাফিজ, শরিফুল, মিরাজ হন রান আউট। তিনজনই ছুতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। আফিফের ব্যাটে আসে ৬ বলে ৫ রান।

টানা দুই ম্যাচে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান লিটনের। প্রথম ম্যাচে অবশ্য ভালো করতে পারেননি। করেছিলেন মাত্র এক রান। দ্বিতীয় ম্যাচেই তেড়েফুঁড়ে করেন সেঞ্চুরি। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া।
৫০ ওয়ানডে ম্যাচে লিটনের রান দাঁড়াল ১৫৫৮। সবোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ১৭৬। বাংলাদেশের হয়ে যা রেকর্ড। গড় ৩৩ দশমিক ১৪। পাঁচ সেঞ্চুরির সঙ্গে চার ফিফটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে লিটন বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ১৬৩টি। ছক্কা ২৪টি।

নবম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪ হাজার রান পূর্ণ করেন লিটন। সব ফরম্যাট মিলিয়ে লিটনের মোট রান ৪০৫১। টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ খেলেছেন তিনি ৪৬টি। ৪৫ ইনিংসে মোট রান ৮৪৪। নেই সেঞ্চুরি। ফিফটি চারটি। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ৬১। গড়টা খুবই কম, ১৯ দশমিক ১৮। টেস্টে খেলেছেন ২৯ ম্যাচ। ৪৯ ইনিংসে ব্যাট হাতে করেছেন ১৬৪৯ রান। সর্বোচ্চ ১১৪। দুটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি তিনি ফিফটি হাঁকান ১১টি। গড় ৩৪ দশমিক ৩৫। স্ট্রাইকরেট ৫৮ দশমিক ২৮।