রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সমস্ত আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানিয়েছে, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে
রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের জেরে মস্কোর প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন প্রশাসন এই অভূতপূর্ব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এই পদক্ষেপটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে বা মার্কিন জনগণের মাধ্যমে রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কোন সম্পদ, যেখানেই থাকুক না কেন তা জব্দ করা হবে।’ ট্রেজারি ডিপার্টেমেন্ট পশ্চিমা মিত্রদের সাথে সমন্বয় করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেনা। দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা করার পুতিনের পদক্ষেপকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় জেরে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে ৩০ শতাংশেরও বেশি মূল্য হারিয়েছে।
রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মান অব্যাহত কমার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ান স্টক মার্কেটে লেনদেন শুরু হতে বিলম্ব হয়েছে। আগের দিন রুবল দর হারিয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর সর্বশেষ ঝড় বয়ে যায় গত শনিবার যখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
সুইফট হচ্ছে একটি বৈশ্বিক আর্থিক বার্তা পরিষেবা সংস্থা। সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার কারণে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জব্দ থাকবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন গত আট বছর ধরে রাশিয়াকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করার উপযোগী করে তুলেছিল এবং যুদ্ধ-উত্তর প্রস্তুতি মোকাবিলা করতে ৬৩০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ করেছেন।
কিন্তু তার ‘শক্তিশালী’ অর্থনীতি এখন অভূতপূর্ব অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেন নিষিদ্ধ করব এবং পুতিনকে যুদ্ধে অর্থ জোগান রোধ করতে তার সব সম্পদ জব্দ করব।’
রুবলের পতনের মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার সুদের হার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করছে।
টাকা তুলতে দীর্ঘ লাইন
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার জনগণ টাকা তুলতে এটিএম বুথের সামনে ভিড় করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে এই ভিড় দীর্ঘ লাইনে পরিণত হচ্ছে। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে।
রুবলের দাম রেকর্ড পরিমাণ নেমে গেছে। মুদ্রার দাম পতনের আশঙ্কায় শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে দেরিতে এবং রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্বিগুণেরও বেশি করেছে।
এসব সমস্যা সত্ত্বেও, ক্রেমলিন আশাবাদী তারা এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবিলা করতে পারবে। ক্রেমলিনের আশাবাদী বক্তব্যের পর ও ভ্লাদিমির পুতিন আজ তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে।
রাশিয়ার জনগণ ইতোমধ্যে একটি পার্থক্য বুঝতে শুরু করেছে। টাকা তুলতে তারা হুড়াহুড়ি করছে। এটিএম বুথে লোকের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।
আসছে দিনগুলোতে রাশিয়ার জনগণ হয়ত টের পাবে যে, তাদের সঞ্চয়ের মূল্য হ্রাস পেতে শুরু করেছে। কারো হয়ত চাকরি হারাতে হতে পারে।
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতবিার ভোরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন পুতিন। তার এ নির্দেশের পরই ইউক্রেনে পুরো মাত্রায় হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। আজ তৃতীয় দিনের মতো ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।
আক্রমণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই যুক্তরাজ্য রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রুশ হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ২৪০ জন বেসামরিক লোক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।