logo
আপডেট : ১ মার্চ, ২০২২ ১৬:২৮
হিরোকে স্বীকৃতি না দিলে হিরো তৈরি হয় না: পুলিশ প্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক

হিরোকে স্বীকৃতি না দিলে হিরো তৈরি হয় না: পুলিশ প্রধান

পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র অনুষ্ঠানে স্বজনরা ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন প্রয়াতদের

হিরোকে যে জাতি স্বীকৃতি দিতে পারে না, সে জাতি হিরো তৈরি করতে পারে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ। এ সময় বাঙালিকে বীরের জাতি আখ্যায়িত

করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা প্রমাণ করেছি জাতিগত বীরেরা কি করতে পারে। যখনই সুযোগ পেয়েছে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে আমরা হিরো।

মঙ্গলবার (০১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরে পুলিশ স্টাফ কলেজ (পিএসসি) কনভেনশন হলে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পুলিশ

মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। আইজিপি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উদযাপিত হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় আজ আবারো একত্রিত হয়েছি আমরা।

২০২১ সালে আমরা ৩৪৬ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি, এরমধ্যে ১৩৮ জনকে কর্তব্যরত অবস্থায় হারিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘শান্তির সময়ে পুলিশ যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। এ যুদ্ধ অশান্তির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের শান্তি, নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। আমরা ২৪ ঘন্টা

এ যুদ্ধে লিপ্ত থাকি। যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। আমরা যেহেতু প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করছি, সেজন্য আমরা প্রতিবছর আত্মত্যাগও করছি।’

কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করে আইজিপি বলেন, ‘তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা, পরিবারের জন্য সববেদনা এ দুই লাইন পর্যাপ্ত নয়।

আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারিয়েছি, প্রিয় মুখকে হারিয়েছে পরিবার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি হুমকির মুখে।

এর বিরাট একটা অনুরণন রয়েছে। সেই পরিবারটিকে ঘুরে দাঁড়াতে আরো ২০ বছর লাগে, সেই পরিবারটিকে কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা তারাই বুঝে। আমরা তাদেরকে

সর্বোচ্চ মহিমান্বিত দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বিপন্ন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘যেহেতু আমরা সবসময় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে থাকি, প্রফেশনাল সেফটি নিশ্চিতেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়,

তাদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়। তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকায় একটি ডিভিশনাল হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে।’

পুলিশের কাজের পরিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, বলা হয়ে থাকে জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেটা পুলিশি দায়িত্বের বাইরে পড়ে। তিনি পুলিশের নিজ দায়িত্বের বাইরে ‘ডেভেলপমেন্ট পুলিশিং’

কনসেপ্ট নিয়ে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করা যায় বলে মতামত ব্যক্ত করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন,

পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার মতো চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। এগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন না

হলে সমাজে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ঘটে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। পুলিশ এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে। পুলিশের ছোটখাট কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা তা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকি।

তার চেয়ে আমরা এমন ভাবতে পারি যে, পুলিশ জেগে থাকে বলেই রাতে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারি। পুলিশকে সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। ছোটখাট ভুল হলে আমরা

তা সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে পারি। আইজিপি ও সিনিয়র সচিব মঞ্চ থেকে দর্শক সারিতে নেমে এসে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী সাত জন পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গের

হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহার তুলে দেন।

এ সময় স্বজনদের মাঝে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। জীবন উৎসর্গকারী বাকি সদস্যদের পরিবারবর্গকে মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলায় সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট

নীরবতা পালন করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের সকল মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলা ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২২ পালিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিরা,

ঢাকার বিভিন্ন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধানরা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১৩৮ জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার এক জন, ইন্সপেক্টর দশজন,

সাব-ইন্সপেক্টর ২৩ জন, সার্জেন্ট এক জন, এএসআই ১৯ জন, নায়েক দুই জন ও ৮১ জন কনস্টেবল রয়েছেন।