নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে নীতিগত অনুমোদন দেওয়ায় খুশির জোয়ারে ভাসছে দুই জেলাবাসী। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটসও দিয়েছেন অনেকে। জেলাবাসীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চশিক্ষিতের হার বাড়বে। সেই সঙ্গে হবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন।
গত সোমবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যায় প্রতিষ্ঠায় ‘বঙ্গবন্ধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নওগাঁ আইন, ২০২২’ ও ‘ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২২’- এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকারপ্রধানের প্রতিশ্রুতির আলোকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে আইন করা হচ্ছে। নতুন দুই বিশ্ববিদ্যালয় আইন অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইনের আদলে করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া পর উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, নওগাঁতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, এজন্য শিক্ষার্থীরাসহ সব মহলই খুশি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে বাড়িতে থেকে তারা পড়াশোনা করতে পারবেন। এতে তাদের বাবা-মায়ের আর্থিক সংকটও দূর হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে শিক্ষার সঙ্গে এই অঞ্চলের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি হবে। কারণ নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক এ বি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নীতিগত অনুমোদন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ জেলার সার্বিক উন্নয়ন ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি। সরকার প্রধানকে অনুরোধ, যেন এই উদ্যোগটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।’
নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আবদুল বারি বলেন, ‘নওগাঁতে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার। আজ তা বাস্তবানের পথে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে যেন গুরুত্ব দিয়ে সবার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। জেলার রাজনৈতিক, সামাজিকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থান নির্বাচন করা হয় এমনটাই আশা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিগত অনুমোদনে আনন্দে ভাসছে ঠাকুরগাঁওবাসী
‘জাগো বাহে কুনঠে সবাই, ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই’, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চাই দিতে হবে’। ২০১৩ সালে এমন স্লোগানে নিজেদের দাবি জানিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওবাসী। দীর্ঘ আট বছর পর সেই দাবি পূরণ হওয়ায় আনন্দে ভাসছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ।
জানা যায়, আট বছর আগে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নতুন প্রজন্মের মেধা ও মনন বিকাশে প্রথম দাবি তোলেন ব্যারিস্টার নূর সাদিক চৌধুরী। প্রধান সমন্বয়ক হয়ে গড়ে তোলেন ঠাকুরগাঁও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঐক্য পরিষদ।
নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করে ব্যারিস্টার নূর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নতুন প্রজন্মের মেধা ও মনন বিকাশে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তিনটি কমিটি গড়ে তুলি। বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি ও সমন্বয় কমিটি। সে সময় তিন কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন সাংবাদিক সৈয়দ মেরাজুল হোসেন, অ্যাডভোকেট নূরুল হাবিব ও আতাউর রহমান।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সে সময় প্রথমে প্রত্যেকটি উপজেলায় গণসংযোগ করি। তারপর কয়েকজন করে গ্রুপ করে দিই। এভাবে আমরা প্রথমে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করি এক বছর। সে সময় আমরা সাড়ে তিন লাখ গণস্বাক্ষর নিই। এছাড়াও অনেক মানববন্ধন করেছি।’
‘আমাদের সঙ্গে জেলার সব শ্রেণিপেশার মানুষও রাস্তায় নেমেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে। অবশেষে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি। এ অনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে এই প্রত্যাশা করি।’
শিক্ষাবিদ মনতোষ কুমার দে বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত সুখবর। শুনে খুব ভালো লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলে এখানে উচ্চশিক্ষিতের হার বাড়বে। সেই সঙ্গে এখানে আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি যে এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠানটি হবে সে এলাকার মানুষগুলোর জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হবে। মানুষ সচেতন হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টি হলে যাতায়াত ব্যবস্থা বাড়বে পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে এ জেলা সমৃদ্ধ হবে। যত দ্রুত সম্ভব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজ শুরু হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আশা করছি, জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি হলে বিভিন্ন পাশ দিয়ে জেলার জীবনযাত্রার মান বাড়বে।’ ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী। তিনি জনগণের জন্য কাজ করে থাকেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে এসে অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দেন। তার মধ্যে তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেন। আজকে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। আমরা ঠাকুরগাঁওবাসী অত্যন্ত আনন্দিত।’
এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে দেশে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫২। এ ছাড়া দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৮টি।