logo
আপডেট : ২ মার্চ, ২০২২ ০৮:৩৬
পতনের মুখে কিয়েভ
* ৩৬ দেশের জন্য আকাশসীমা বন্ধ * বেসামরিক লোকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ রাশিয়ার * ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহারের অভিযোগ

পতনের মুখে কিয়েভ

দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লণ্ডভণ্ড ইউক্রেনের প্রতিরোধ বুহ্য। ছবি- দ্য গার্ডিয়ান

কিয়েভ দখলের জন্য জোর কদমে এগিয়ে চলছে রাশিয়া। ইতোমধ্যে কিয়েভের বেসামরিক লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলেছে মস্কো। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রলালয় এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়।

ইউক্রেন নিয়ে মুহূর্তে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে রাশিয়া। একদিকে সংকট নিরসনে আলোচনার টেবিলে বসেছে, অন্যদিকে হামলা অব্যাহত রেখেছে। একদিকে বলছে ইউক্রেন দখলের কোনো ইচ্ছা তার নেই। অন্যদিকে রাশিয়ার ৭৫ শতাংশ সেনা এখন ইউক্রেন আগ্রাসনে নিয়োজিত। তাদের ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সেই সঙ্গে আসছে ইউক্রেনের তীব্র প্রতিরোধ আর তুমুল লড়াইয়ের খবর। ওই বহরে সেনা সদস্যের সঙ্গে ট্যাংক ও সাঁজোয়া গাড়ি আছে। এ ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই কিয়েভ-সংলগ্ন এলাকায় বোমা ফেলা শুরু করে রাশিয়া। কিয়েভে হামলার সাইরেন বাজানো হচ্ছে।

এছাড়া ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে লড়াই চলছে। ইউক্রেনের দক্ষিণে বন্দরনগরী বার্দিয়ানস্কে গত সোমবার ১৫টি ট্যাংক ঢুকেছে। বার্দিয়ানস্ক থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে মারিওপোলসহ বেশ কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ এখন রাশিয়ার হাতে। সর্বশেষ রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করছে। যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত মস্কোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। খবর: বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ানের।

শত শত মানুষের মৃত্যু আর ছয় লাখেরও বেশি মানুষের ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া এ সংকট গতকাল মঙ্গলবার গড়িয়েছে ষষ্ঠ দিনে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সেনা অভিযান শুরুর পর খুব দ্রুত সফলতা পাওয়ার যে প্রত্যাশা রুশ প্রেসিডেন্টের ছিল, তা পূরণ হয়নি। মার্চের ২ তারিখের মধ্যে অভিযান শেষ করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিলেও তা সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে। গত সোমবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি এবং পরের বৈঠকের সূচি নিয়েও সুস্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সেনা অভিযান শুরু করায় রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে শায়েস্তা করার পথ অবলম্ব করেছে পশ্চিমাদেশগুলো। রাশিয়ার কর্মকর্তা, শীর্ষ ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, এমনকি পুতিনের বিরুদ্ধেও তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে লড়াইয়ে সেনা পাঠানো বা একটি নো-ফ্লাই জোন (উড়ান নিষিদ্ধ অঞ্চল) ঘোষণার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

এছাড়া পশ্চিমের দেশগুলো রুশ বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়াও এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যরাষ্ট্রগুলোসহ ৩৬ দেশের জন্য আকাশসীমা নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া। তবে ত্রাণসামগ্রীবাহী বিমান ও কূটনৈতিক মিশনের বিমানগুলোর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি বলেছেন, বর্তমান ইউক্রেন সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। মার্কিনিদের সাজানো এ যুদ্ধের অবসান দাবি করে তিনি বলেন, ইরান বিশ্বের যেকোনো স্থানের যুদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রকে একটি মাফিয়া সরকার। ইউক্রেন ওয়াশিংটনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির নির্মম শিকারে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা যেকোনো দেশে মানুষ হত্যা ও অবকাঠামো ধ্বংসের বিরোধিতা করি।

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোটর্ (আইসিজে) বা, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বলেছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত করবে তারা। আইসিজের প্রসিকিউটর করিম খান জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাইবে। তিনি বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ হলো তদন্ত শুরু করার জন্য আদালতের প্রি-ট্র্যায়াল চেম্বার থেকে অনুমোদন চাওয়া। অনুমোদন পেলেই প্রক্রিয়াটি নিয়ে এগিয়ে যাব।

৫ ঘণ্টা আলোচনায় যা হলো

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছে দুই পক্ষ। সোমবার বেলারুশ সীমান্তে দুইদেশের প্রতিনিধিদল প্রথম দফার বৈঠকে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তী দফার বৈঠকের আগে এগুলো নিয়ে তারা শলাপরামর্শ করবেন বলে জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্রবিরতি নিয়ে আলোচনা করা। সুনির্দিষ্ট সমাধানে পৌঁছাতে কয়েকটি অগ্রাধিকারের বিষয় চিহ্নিত হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্টের সহযোগী ভ্লাদিমির মেদিনস্কিও বলেন, যেসব বিষয়ের ওপর ভর করে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সেসব বিষয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। বেলারুশ ও পোল্যান্ডের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চলে পরবর্তী দফার বৈঠক হবে।

প্রতিনিধিদলের মধ্যে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ। অবিলম্বে অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছানো এবং সব রুশ সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য তারা জোর দাবি জানায়।

দখলের পরিকল্পনা নেই: রাশিয়া

রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালেও দেশটি দখলের পরিকল্পনা নেই। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের স্বঘোষিত দুই প্রজাতন্ত্রের মানুষের জীবন রক্ষা এবং আট বছর ধরে তাদের ওপর গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য দায়ীদের শায়েস্তা করতেই এই অভিযান। ইউক্রেনে অভিযান নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তিন দিনের বিশেষ এক জরুরি অধিবেশন এসব বলেন রাশিয়া রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া।

তিনি আরো বলেন, ইউক্রেন দখল করাটা আমাদের পরিকল্পনার অংশ নয়। ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করা প্রয়োজন। কিয়েভ সরকার কর্তৃক সংঘটিত ভয়াবহ অপরাধের উদাহরণ হিসেবে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করায় ওডেসার ভবনে ৪০ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

৩৬ দেশের জন্য আকাশসীমা বন্ধ

ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যরাষ্ট্রগুলোসহ ৩৬ দেশের জন্য আকাশসীমা নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া। গত সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে ত্রাণসামগ্রীবাহী বিমান ও কূটনৈতিক মিশনের বিমানগুলোর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

পশ্চিমের দেশগুলো রুশ বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমায় নিষেধাজ্ঞা জারির পরই এই সিদ্ধান্ত নিল রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পরদিনই ব্রিটেন নিজেদের আকাশসীমায় রুশ বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারপর একে একে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন ও পর্তুগালের মতো ইউরোপের অনেক দেশই ব্রিটেনের পথে হাঁটে। রোববার ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন ইইউর আকাশসীমায় রুশ বিমান নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন।

পারমাণু অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে ইউক্রেন

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে উঠার চেষ্টার অভিযোগ করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক সম্মেলনে যুক্ত হয়ে এমন অভিযোগ করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বলেন, এটি একটি সত্যিকারের বিপদ- তাই রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পরিকল্পনার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা শুরু করেছে।

এর মধ্য দিয়ে জেলেনস্কির শাসন প্রতিবেশী দেশগুলোর এবং সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে ইউক্রেনের কাছে এখনো সোভিয়েত পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং এই ধরনের অস্ত্র সরবরাহের সুযোগ রয়েছে। আমরা এই প্রকৃত বিপদের প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হতে পারি না।

ওয়াশিংটনকে ইউরোপ থেকে তার পারমাণবিক অস্ত্র সরিয়ে নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। পশ্চিমারা সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোতে সামরিক স্থাপনা বানাতে পারবে না। ইউক্রেইনের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকাতেই দেশটিতে অভিযান শুরু হয়েছে।

তার বক্তব্য শুরু হওয়ার পরপরই ইউক্রেইন, ব্রিটেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা সম্মেলনস্থলে থেকে ওয়াক আউট করেন। সম্মেলনে সরাসির যোগ দিতে ল্যাভরভের জেনিভা যাওয়ার কথা থাকলেও ইউরোপীয় দেশগুলোর দেওয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি যেতে পারেননি। এর বদলে ধারণ করা একটি ভিডিও বার্তা দেখানো হয়।

সংকট যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি বলেছেন, ইউক্রেন সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। তাদের সাজানো এ যুদ্ধের অবসান জরুরি। ইরান বিশ্বের যেকোনো স্থানের যুদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুওয়াতপ্রাপ্তি দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে একটি মাফিয়া সরকার আখ্যায়িত করে বলেন, ইউক্রেন ওয়াশিংটনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির নির্মম শিকারে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা যেকোনো দেশে মানুষ হত্যা ও অবকাঠামো ধ্বংসের বিরোধিতা করি। পশ্চিমা শক্তিগুলোর ওপর মোটেও নির্ভর করা যায় না। কারলণ তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি যে সমর্থন দেওয়ার কথা বলে, তা সত্যি নয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি উভয়কে যুক্তরাষ্ট্র রক্ষা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তাদের কারো পেছনে দাঁড়ায়নি ওয়াশিংটন।

যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করবে আইসিজে

ইউক্রেনে হামলা চালানোয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ইন্টান্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আইসিজের প্রসিকিউটর করিম খান জানিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাইবে। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো তদন্ত শুরু করার জন্য আদালতের প্রি-ট্র্যায়াল চেম্বার থেকে অনুমোদন চাওয়া। অনুমোদন পেলেই প্রক্রিয়াটি নিয়ে এগিয়ে যাব।

রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার

জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার ১২ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী রাষ্ট্রদূত রিচার্ড মিলস নিরাপত্তা পরিষদকে কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে কূটনীতিকদের চলে যেতে বলা হয়েছে, তারা এমন কিছু কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যা কূটনীতিক হিসেবে একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পাওয়া দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তবে রুশ কূটনীতিকেরা শিষ্টাচারবহির্ভূত কী কাজ করেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া জানিয়েছেন, ৭ মার্চের মধ্যে তাদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে।

ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহারের অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইউক্রেনের দূত ওকসানা মারকারোভা দাবি করেছেন, ইউক্রেনে চলমান লড়াইয়ে সোমবার রাশিয়া নিষিদ্ধঘোষিত ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে। কংগ্রেসে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কাছে চলমান পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ উপস্থাপনের সময় তিনি এ অভিযোগ করেন। কংগ্রেসে বক্তব্য দিয়ে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তারা (রাশিয়া) আজ ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী তা নিষিদ্ধ।

ভ্যাকুয়াম বোমার ক্ষেত্রে প্রচলিত গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয় না। এ ক্ষেত্রে উচ্চচাপ তৈরি করে আশপাশের এলাকার অক্সিজেন চুষে নিয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে রাশিয়া সত্যিই ইউক্রেনে ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে কি না, তার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, এর আগে চেচনিয়া রুশ প্রজাতন্ত্রে এ ধরনের বোমার ব্যবহার দেখা গিয়েছিল।

পুতিনের পাশে কিম জং উন

উত্তর কোরিয়া বলেছে, রুশ আগ্রাসন নয়, ইউক্রেন সংকটের জন্য পশ্চিমাদের আধিপত্যবাদী নীতি ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ। গত সোমবার এক বিবৃতিতে উত্তর কোরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পশ্চিমারা অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।

এতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সংকটের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের আধিপত্যবাদী নীতি- যার মাধ্যমে তারা অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ইউরোপে আক্রমণাত্মক অস্ত্র মোতায়েন ও পূর্বে ন্যাটো সম্প্রসারণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা। এ বিষয়ে রাশিয়ার দাবি বৈধ ও যৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। বিবৃতিতে আফগানিস্তান, লিবিয়া ও ইরাকে পশ্চিমাদের সামরিক অভিযানের কথাও উল্লেখ করে উত্তর কোরিয়া।

নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে চীন

চলমান সংঘাতের কারণে নিজ দেশের নাগরিকদের ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে চীন। দেশটিতে অবস্থিত চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, তাদের নাগরিকদের একটি দল সোমবার ইউক্রেন ছেড়েছে। এরা সবাই চীনা শিক্ষার্থী। কিয়েভ থেকে তারা মল্ডোভার দিকে যাচ্ছেন। চীন যে শুধু তাদের নাগরিকদেরই ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে এর পেছনে অনেকেই নানা কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে।

কারো মতে, বেইজিং হয়তো মনে করছে, রাশিয়াকে এই মুহূর্তে রাগানো উচিত হবে না। এছাড়া চীন হয়তো ভেবেছিল, রাশিয়া এত দ্রুত ইউক্রেনে ভয়াবহ সংঘাতে জড়াবে না। সে কারণে লোকজনকে আগে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি তারা। কিন্তু খুব অল্প সময়েই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। চীন হয়তো হিসেব-নিকেশ করেছে যে, পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। সবকিছু বিবেচনা করেই এখন দ্রুত লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছে বেইজিং।

কিয়েভের দিকে ৪০ মাইল সামরিক বহর

রাশিয়ার স্থল বাহিনীর ৪০ মাইল লম্বা একটি বহর ট্যাঙ্কসহ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি কোম্পানি জানিয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে গ্রহণ করা ভিত্তিতে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস জানায়, আগের প্রতিবেদনগুলোতে ওই সাঁজোয়া বহর ১৭ মাইল দীর্ঘ বলা হলেও সেটি আসলে প্রায় ৪০ মাইল দীর্ঘ।

ওই বহরটিতে কয়েকশ সামরিক যান রয়েছে এবং তারা রাজধানীর উত্তরে ইভানকিভ শহরের কাছাকাছি আছে। হোয়াইট হাউস রাশিয়ার এই সামরিক বহরটিকে নিবিড় নজরদারিতে রেখেছে। ম্যাক্সারের প্রকাশ করা নতুন আরো কিছু ছবিতে বেলারুশের দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেইনের সীমান্তের ২০ মাইলের মধ্যে স্থল বাহিনী ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার দেখা গেছে।